গঙ্গা ও বঙ্গোপসাগরের মিলনস্থান তীর্থভূমি গঙ্গাসাগর।
ছোটবড় ৫১টি দ্বীপ নিয়ে ৫৮০ বর্গ কিমি জুড়ে সাগরদ্বীপ। গঙ্গার মর্ত্যে আসা ও সগর রাজার পুত্রদের জীবনদানের লোকগাথাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এই তীর্থভূমি। কপিল মুনির আশ্রমটি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গেলেও পরবর্তীকালে গড়ে ওঠা কপিল মুনির মন্দিরটিকে কেন্দ্র করে ভক্ত সমাগম হয়। মকর সংক্রান্তির পুণ্য তিথিতে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় জমে এই সঙ্গমে। প্রতি বছর মকর সংক্রান্তির দিন সারা দেশ থেকে হিন্দু পুণ্যার্থীরা গঙ্গা ও বঙ্গোপসাগরের সঙ্গম স্থলে ডুব দিয়ে পুণ্যার্জন করতে এখানে আসেন। তারপর তাঁরা কপিল মুনির আশ্রমে পুজো দেন। এ সময় এখানে গঙ্গাসাগর মেলা হয়, যা ভারতের অন্যতম বৃহত্তম মেলা। রামায়ণ, মহাভারত থেকে বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস কিংবা রবীন্দ্রনাথের কবিতা, সর্বত্রই স্থান করে নিয়েছে গঙ্গাসাগর । বহু হিন্দু পুরাণেও গঙ্গাসাগরের উল্লেখ আছে।
ভ্যানরিকশায় চেপে বেরিয়ে পড়ো দ্বীপ দর্শনে। মঠ–মন্দির-আশ্রমের ছড়াছড়ি এই সাগরসঙ্গমে। রয়েছে কপিল কুটির সাংখ্যযোগ আশ্রম, শঙ্করাচার্য আশ্রম, ওঙ্কারনাথ ঠাকুরের যোগেন্দ্র মঠ, মনানন্দ কপিলের হরি ওঁ আল্লা গড কপিল কল্পতরু আশ্রম, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ, রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম ইত্যাদি।
তীর্থযাত্রী কিংবা ভ্রমণপিপাসু মানুষ, গঙ্গাসাগর সকলের কাছেই আকর্ষণীয় গন্তব্য। রুপোলি বালুতট, পরিষ্কার আকাশ ও শান্ত সমুদ্র -- সব মিলিয়ে নিরিবিলিতে সপ্তাহান্ত কাটাতে চাওয়া পর্যটকদের কাছে গঙ্গাসাগর বরাবরই আকর্ষণীয়।
সাগরদ্বীপ নামেও পরিচিত গঙ্গাসাগরের সবটুকু এখনও চেনা বাকি, তাই এখানে দূষণও কম। দ্বীপের বাতিঘর থেকে গোটা সমুদ্রতটটি দেখতে পাওয়া যায়। সেখানে দাঁড়িয়ে তোমরা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করতে পারবে। সূর্যাস্তের সময় গোটা আকাশ সোনালি বর্ণের হয়ে যায়, দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ে লাল আভা। রুপোলি বালুতটে সূর্যের শেষ রশ্মিগুলি প্রতিফলিত হয়।
গঙ্গাসাগর কলকাতা থেকে ১৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। যদিও স্থানটি কলকাতার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নয়। বাসে করে কাকদ্বীপে পৌঁছে, নৌকায় মুড়িগঙ্গা পেড়িয়ে কচুবেড়িয়ায় পৌঁছতে হবে। সেখান থেকে বাসে ৩০ কিলোমিটার গেলে পৌঁছনো যাবে গঙ্গাসাগরে। এ ছাড়া নামখানা দিয়েও যাওয়া যায় গঙ্গাসাগরে।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/15/2020