জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ি থেকে আরও ৭-৮ কিলোমিটার দূরে জরদা নদীর ধারে কালিকাপুরাণ, স্কন্দপুরাণ খ্যাত জল্পেশ মন্দিরের অবস্থান, যা উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ তীর্থস্থান হিসাবে পরিচিত।
পুরাণমতে এই তীর্থ হাজার বছরের পুরনো। প্রাগজ্যোতিষপুরের (অসম) জনৈক রাজা জল্পেশ এই মন্দির তৈরি করান বলে দেবতা ও মন্দিরের নামও জল্পেশ। যদিও পাথুরে প্রমাণে তাঁর সাক্ষ্য মেলে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোচবিহারের রাজা প্রাণনারায়ণ (১৬৩২-৬৫ খ্রি) এবং তাঁর পুত্র মোদনারায়ণ (১৬৬৫-৮০ খ্রি) এই মন্দির তৈরি করান। আরও জানা যায় দিল্লির মুসলমান স্থপতির হাতে মন্দির গড়ে ওঠে। গম্বুজাকৃতি চূড়াটি তারই নিদর্শন বলে মনে করা হয়। যদিও চূড়াটি লিঙ্গাকৃতি। জল্পেশ অনাদিলিঙ্গ। তাই এই চূড়াটি জল্পেশেরই প্রতিরূপ বলে অনেকে মনে করেন। ১২৪ ফুট দীর্ঘ ও ১২০ ফুট প্রশস্ত এই মন্দিরের উচ্চতা ১২৭ ফুট। গঠনশৈলীতে অননুকরণীয় এবং বিশালতায় অদ্বিতীয়। শিবলিঙ্গটি সবজেটে সাদা। লিঙ্গের খুব অল্প অংশই দেখা যায়।
শিবরাত্রিতে মেলা বসে জল্পেশে। সপ্তদশ শতাব্দীর শেষে যখন মন্দির নির্মাণ হয়, তখন থেকেই মেলার সুচনা। সে দিক থেকে জল্পেশের মেলা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রাচীন মেলা হিসাবে চিহ্নিত।
প্রতি বছর এই মেলায় প্রায় লক্ষাধিক মানুষ এসে শিবের মাথায় জল ঢালে। বহু ভক্ত গেড়ুয়া বসন পড়ে অদূরে তিস্তা নদীতে স্নান করে কাঁধে বাঁক নিয়ে শিবের মাথায় জল ঢালতে যায়। মন্দিরের চার পাশে মেলা বসে এক মাস ধরে। আসাম, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলাগুলির বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের ভিড় মেলায় উপচে পড়ে। জল্পেশ মন্দিরকে ঘিরে প্রায় ২ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে মেলা বসে। আর মেলাকে ঘিরে বসে লোকসংস্কৃতির আসর। সোঁদা মাটির গন্ধে ভরা এই জেলাসহ উত্তরের লোকসঙ্গীত শিল্পীদের গানে থাকে চিরায়ত ঐক্য ও সম্প্রীতির সুর। কৃষ্ণনগরের মৃৎশিল্পীদের তৈরি নজরকাড়া মাটির পুতুল, বাঁশ ও বেতের তৈরি বিভিন্ন চোখ ধাঁধানো সামগ্রী, ঘর গৃহস্থালির বিভিন্ন উপকরণ থেকে জিলিপি, তেলেভাজা, ছোটদের মুখরোচক খাবার, চিড়ে-মুড়ি-মুড়কির পাশে মেলায় চোখ টানে ফাস্ট ফুডের দোকানও।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/29/2020