দক্ষিণেশ্বরের কালী মন্দির আক্ষরিক অর্থেই রানি রাসমণির স্বপ্নের মন্দির। জানবাজারের রানির কথায়, কাশী যাওয়ার পথে স্বয়ং দেবী কালী তাঁকে স্বপ্নে এই মন্দির তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই মন্দির তৈরি করতে তখনকার দিনে রানির খরচ হয়েছিল ৯ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। ১৮৪৭-তে মন্দির নির্মাণ শুরু হয়ে শেষ হয় ১৮৫৫-য়। ১০০ ফুটেরও বেশি উঁচু এই নবরত্ন মন্দিরের স্থাপত্য দেখার মতো। গর্ভগৃহে সহস্র পাপড়ির রৌপ্য-পদ্মের উপর শায়িত শিবের বুকে দেবী কালী দাঁড়িয়ে। এক খণ্ড পাথর কুঁদে তৈরি হয়েছে এই দেবীমূর্তি।
কৈবর্তের গড়া মন্দির --- তখনকার ব্রাহ্মণ সমাজ বয়কট করলেন। পূজারী হবেন না কেউ। অবশেষে হুগলির কামারপুর থেকে রামকুমার চট্টোপাধ্যায় এলেন পূজারী হয়ে। রামকুমারের পর তাঁর ভাই গদাধর দায়িত্ব নিলেন। কালে কালে গদাধর হলেন শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস। সাধক রামকৃষ্ণের সমস্ত ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে জড়িয়ে দক্ষিণেশ্বরের এই মন্দির। তাঁর সারল্য ও মানবিক বোধের সংমিশ্রণে তিনি এখানে দেবী কালিকে ভবতারিণী রূপে উপাসনা করে বিখ্যাত হয়েছিলেন। শ্রী রামকৃষ্ণ বাসও করতেন মন্দির প্রাঙ্গণের উত্তর-পশ্চিম কোণের একটি ঘরে, আজ যা মহাতীর্থ। রোজ হাজার হাজার দর্শনার্থী আসেন তাঁকে প্রণাম জানাতে। কাছেই পঞ্চবটি (অশ্বথ, বট, বিল্ব, অশোক ও আমলকী)। এখানে নিয়মিত সাধনায় বসতেন শ্রীরামকৃষ্ণ। মন্দির চত্বরে ঢোকার আগে রয়েছে রানি রাসমণির মন্দির। আর গঙ্গার পাড় ধরে রয়েছে দ্বাদশ শিবমন্দির। সুবিস্তীর্ণ মন্দির প্রাঙ্গণে আরেক দ্রষ্টব্য লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির।
অদূরেই আরেক হিন্দু তীর্থ – আদ্যামায়ের মন্দির। মানুষকে প্রেম ও আদর্শে দীক্ষিত করতে ১৩৪০ বঙ্গাব্দে শুরু হয়ে ১৩৭৫ সনের মকর সংক্রান্তিতে শেষ হয় শ্রী অন্নদা ঠাকুরের স্বপ্নে দেখা মন্দিরের নির্মাণ। ৩ চুড়োওয়ালা ৩ ধাপের মন্দির – প্রথম ধাপে শ্রীরামকৃষ্ণ, মাঝের ধাপে আদ্যামা এবং সব চেয়ে উপরের ধাপে রাধাকৃষ্ণ।
শিয়ালদহ স্টেশন থেকে ট্রেনে বা কলকাতার প্রায় সব জায়গা থেকে বাসে যাওয়া যায় দক্ষিণেশ্বর।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/29/2020
রানি রাসমণির স্বপ্নের মন্দির দক্ষিণেশ্বরের কালী মন...