অতীতের বংশবাটি আজকের বাঁশবেড়িয়া। হংসেশ্বরী মন্দিরের জন্য খ্যাতি বাঁশবেড়িয়ার। তন্ত্রমতে তৈরি এই মন্দিরের ৫টি তলা মানুষের দেহের ইড়া, পিঙ্গলা, বজ্রাক্ষ, সুষুম্না ও চিত্রিণী – এই পাঁচটি নাড়ির ইঙ্গিত বহন করছে। ২১ মিটার উঁচু এই মন্দিরের সহস্র পাপড়ির পাথুরে চূড়া তথা ১৩টি মিনার – রূপ তার না-ফোটা পদ্ম। পাথরের শিবের নাড়ি থেকে বেরিয়ে আসা সরু ডাঁটার পদ্মে আসীনা দেবী এখানে দক্ষিণাকালীর বীজ হংসেশ্বরী – নিম কাঠে তৈরি নীলরঙা চতুর্ভুজা। মন্দিরের নীচে থেকে উপরে ১৪টি শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত। বেলা ১১টা থেকে ৩টে পর্যন্ত মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকে।
অনুপম স্থাপত্যের নিদর্শন বাঁশবেড়িয়ার এই হংসেশ্বরী মন্দির। মন্দির নির্মাণ করতে সময় লেগেছিল ১৩ বছর --- ১৮০১ থেকে ১৮১৪ পর্যন্ত। রাজা নৃসিংহদেব ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দে হংসেশ্বরী কালীমন্দিরের নির্মাণ শুরু করেন এবং তাঁর মৃত্যুর পর ১৮১৪ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর বিধবা পত্নী রাণী শঙ্করী মন্দির নির্মাণ সম্পন্ন করেন। এই মন্দিরে তেরোটি রত্ন ও মিনার প্রতিটি প্রস্ফুটিত পদ্মের ন্যায় নির্মিত মন্দিরের গর্ভগৃহের উচ্চতা ৭০ ফুট। দেবীমূর্তি নীলবর্ণা, ত্রিনয়নী, চতুর্ভূজা, খড়্গধারিণী ও নরমুণ্ডধারিণী। এক অদ্বিতীয় গঠনে হংশেশ্বরী মন্দির, বাংলার পুরানো স্থাপত্বের নিদর্শণে একটা স্থান নিয়ে নিয়েছে। তান্ত্রিক মনস্ক মানুষের স্মৃতিতে মন্দির গড়ে উঠলেও তান্ত্রিকতার কোন প্রভাব এখানে নেই।
হংসেশ্বরী মন্দিরের পাশেই আছে অনন্ত বাসুদেব মন্দির। এই মন্দির আরও পুরনো। ১৬৭৯ খ্রিস্টাব্দে রাজা রামেশ্বর দত্ত এই চারচালা মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। অজস্র সুন্দর টেরাকোটা কাজের নিদর্শন রয়েছে এই মন্দিরের গায়ে। প্যানেলগুলোর মধ্যে দেব-দেবীর মূর্তি, ভালবাসা ও যুদ্ধের দৃশ্য এবং তখনকার রোজকার জীবনের এক ঝলক দেখা যায়। পুরো মন্দির এলাকাটা ভারতের প্রত্নতাত্বিক বিভাগের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে ব্যান্ডেল থেকে ৪ কিমি দূরের বাঁশবেড়িয়ায় আসা যায় ট্রেনে। হাওড়া থেকে সোজা বাঁশবেড়িয়ায়। তবে ট্রেনের সংখ্যা কম। তাই ট্রেনে চুঁচুড়ায় এসে সেখান থেকেও বাসে বা মিনিবাসে আসা যায়। শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে নৈহাটি এসে গঙ্গা পেরিয়ে চুঁচুড়া হয়েও আসা যায়। থাকার জন্য বাঁশবেড়িয়া পুরসভার অতিথিশালা আছে।
সূত্র: পোর্টাল কনটেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/16/2020