শৈবতীর্থ বাণেশ্বর। কোচবিহারের বিখ্যাত মন্দিরগুলির মধ্যে বাণেশ্বর শিবমন্দির অন্যতম। মন্দিরটির উত্তর দিকে অবস্থিত একটি চালামন্দির ত্রিরথ, সিংহাসনের শীর্ষে পদ্মের উপর শিবমূর্তির উপবিষ্ট বিগ্রহ ও এক অর্ধনারীশ্বরের মূর্তি অধিষ্ঠিত। পিতলের মূর্তি উচ্চতায় ৬ ইঞ্চির মতো। অর্ধনারীশ্বরের অর্থাৎ শিবদুর্গার সম্মিলিত পৌরাণিক রূপ বাণেশ্বর বলেও আখ্যাত। মূর্তির ডান দিকে শিবের জটা আর বাম দিকে দুর্গার মাথায় অর্ধ পদ্মাকৃতি মুকুট দেখা যায়। মন্দিরটির প্রতিষ্ঠাকাল নিয়ে নানা মতবাদ চালু আছে। কেউ বলেন বাণরাজা, কেউ বলেন রাজা জল্পেশ মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন। তবে পরবর্তী সময়ে মহারাজা প্রাণনারায়ণই ইঁটের প্রাচীর ঘিরে মন্দিরটি সংস্কার করেছিলেন। কিংবদন্তি অনুসারে দৈত্যরাজ বাণাসুর বাহুবলে স্বর্গরাজ্য অধিকার করে দেবতাদের তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। বাণাসুর ছিলেন শিবের একনিষ্ঠ ভক্ত। দেবতাদের দুর্দশা দেখে তিনি বাণাসুরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বর্গরাজ্য দেবতাদের ফিরিয়ে দিতে। বাণাসুর একটি শর্তে স্বর্গরাজ্য ফিরিয়ে দিতে সম্মত হয়েছিলেন সেটি হল যদি তাঁর উপাস্য দেবতা এই স্থানে অধিষ্ঠান করেন। সেই সময় থেকেই বাণেশ্বর শিবের প্রতিষ্ঠা। এই মন্দিরটি উচ্চতায় ৪০ ফুট, গম্বুজাকৃতি, বাঁকানো কার্নিশ এবং মন্দিরটি পশ্চিমমুখী। মন্দিরের গর্ভগৃহটি মাটির সমতল থেকে ৭ ফুট নীচে সিঁড়ি বেয়ে নামতে হয়। প্রধান দরজার উপরে খিলান বহুমুখী এবং ছুঁচালো। খিলানের উপরে লহরা, তার উপর বেঁকি। উপরে পর পর গম্বুজ, পদ্ম, পলকাটা আমলক, কলস ও ত্রিশূল স্থাপিত। মন্দিরের অভ্যন্তরে কালো পাথরের শিবলিঙ্গ এবং গৌরীপট্ট প্রতিষ্ঠিত। পাশেই আরেকটি মূর্তি রয়েছে দু’হাতে ত্রিশূল নিয়ে। দেবী চণ্ডীর পিতলের মূর্তি। পাশে রয়েছে পাথরের তৈরি একটি ছোটো বিষ্ণুপট্ট, তাতে লক্ষ্মী, সরস্বতী, গঙ্গা, যমুনা মূর্তি খোদিত। বাণেশ্বর শিবপূজা উপলক্ষে শিব চতুদর্শীতে মহাসমারোহে পূজা অনুষ্ঠিত হয় এবং সপ্তাহব্যাপী মেলা চলে।
কোচবিহার বেড়াতে গেলে রকমারি মন্দির তোমায় দেখতেই হবে। এগুলির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বহু ইতিহাস। আর সেই ইতিহাসের এক টুকরো লেগে রয়েছে এই বাণেশ্বর মন্দিরের শরীরে।
সূত্র: পোর্টাল কনটেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/29/2020