“শ্রীরামকৃষ্ণ….(হরিপদর প্রতি) “তুই গিরিশ ঘোষের বাড়ি যাস?” হরিপদ -– “আমাদের বাড়ির কাছে বাড়ি, প্রায়ই যাই।” শ্রীরামকৃষ্ণ -– নরেন্দ্র যায়? হরিপদ –- হাঁ, কখন কখন দেখতে পাই। শ্রীরামকৃষ্ণ – গিরিশ ঘোষ যা বলে (অর্থাৎ ‘অবতার’ বলে) তাতে ও কি বলে? হরিপদ – তর্কে হেরে গেছেন। শ্রীরামকৃষ্ণ – সে (নরেন্দ্র) বললে, গিরিশ ঘোষের এখন এত বিশ্বাস আমি কেন কোন কথা বলব?” (শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত)
পরিচয়ের প্রথম দিন থেকেই কিন্তু গিরিশচন্দ্র শ্রীরামকৃষ্ণের প্রতি এত আপ্লুত ছিলেন না। প্রতিবেশী কালিনাথ বোসের বাড়িতে শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ গিরিশের। শ্রীরামকৃষ্ণের তখন সমাধি হয়েছে। গিরিশ খুব একটা বিশ্বাস করেননি তাঁকে। গিরিশের মনে হয়েছিল এ সব বুজরুকি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি শ্রীরামকৃষ্ণের অন্ধ ভক্ত হয়ে ওঠেন। কথিত আছে, এক বার দু’জনের সাক্ষাৎ হয়েছে। দু’ জনেই নমস্কার আর প্রতি-নমস্কারের বন্যা বইয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত গিরিশকে হার মানতে হয়। এই ঘটনা সম্পর্কে গিরিশচন্দ্র পরে নাকি বলেছিলেন, শত্রুকে ঘায়েল করার একটা অস্ত্র প্রণাম করা। পুরাকালে দেবতারা এই প্রণামাস্ত্রে অসুরদের বধ করতেন। সে দিন রামকৃষ্ণরূপী দেবতা বধ করেছিলেন অসুররূপী গিরিশকে। ১৯৮৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর শ্রীরামকৃষ্ণ স্টার থিয়েটারে গিরিশচন্দ্রের নাটক ‘চৈতন্যলীলা’ দেখতে যান। সেখানে তিনি চৈতন্যরূপী নটী বিনোদিনীর অভিনয় দেখে আপ্লুত হয়ে পড়েন। গিরিশচন্দ্র ঘোষ (২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৮৪৪ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯১২) ছিলেন একজন বাঙালি সুরকার, কবি, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, নাট্য পরিচালক ও অভিনেতা। এই বহুমুখী প্রতিভাধর মানুষটি ছিলেন বাংলার নব জাগরণের যুগে বাংলা নাটকের প্রাণ পুরুষ ও পথিকৃৎ। গিরিশ শ্রীরামকৃষ্ণের আধ্যাত্মিক ভাবনার হদিশ পেতে বারবার তাঁর কাছে আসতেন। শ্রীরামকৃষ্ণের প্রভাবে আসার পর থেকে তিনি ভক্তি রসাত্মক নাটক লিখতে শুরু করেন। ১৯৮৪-৮৯-এর মধ্যে তিনি রচনা করেন ‘চৈতন্যলীলা’, ‘বুদ্ধদেব’, ‘বিল্বমঙ্গল’ প্রভৃতি। উত্তর কলকাতায় যখন গিরিশ অ্যাভেনিউ তৈরি হয় তখন গিরিশ্চন্দ্রের বাড়িটি রাস্তার মাঝখানে পড়ে। বাড়িটিকে মাঝে অক্ষত রেখেই রাস্তাকে দু’ দিক থেকে বের করে দেওয়া হয়। তাই গিরিশচন্দ্রের বাড়ি চোখ এড়িয়ে যাওয়ার কোনও উপায় নেই।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/28/2020