দেবদেবীর মাটির মূর্তি তৈরির কারিগরদের বসতিটির নাম হল কুমোরটুলি। এই অঞ্চল কলকাতার উত্তরভাগে অবস্থিত। বাঁশ-খড়ের কাঠামো থেকে শুরু করে প্রতিমা তৈরি পর্যন্ত প্রতিটি ধাপই এখানে গেলে দেখতে পাওয়া যায়। বিশেষত দুর্গাপুজোর আগে এই অঞ্চল জুড়ে কর্মষজ্ঞ চলতে থাকে। কাজে ব্যস্ত প্রতিমা শিল্পীদের দক্ষতাকে মনোযোগ দিয়ে নিরীক্ষণ করলে তোমরা মুগ্ধ হবেই। বর্তমানে কুমোরটুলিতে তৈরি প্রতিমা গোটা পৃথিবীর বিভিন্ন মণ্ডপের শোভা বর্ধন করে থাকে। তবে শুধু প্রতিমাই নয়, মৃৎশিল্পের বিভিন্ন নমুনা তৈরি করা হয় কুমোরটুলিতে। কুমোরটুলির মন্দিরের মূর্তিটি দেশভাগের সময় ঢাকা থেকে এসেছিল, এটি দেবী দ্বারকেশ্বরীর মূর্তি।
১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধে জয়লাভের পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য বিস্তারে মনোনিবেশ করে। গোবিন্দপুর গ্রামে কোম্পানি ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সুতানুটি অঞ্চলে। গোবিন্দপুরের ধনিক সম্প্রদায় পাথুরিয়াঘাটা ও জোড়াসাঁকো অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। এর পাশাপাশি গড়ে ওঠে অন্যান্য কয়েকটি অঞ্চলও।
কোম্পানির ডিরেক্টরদের আদেশানুসারে জন জেফানিয়া হলওয়েল ‘কোম্পানির মজুরদের জন্য পৃথক পৃথক অঞ্চল’ বণ্টন করেন। এই ভাবে কলকাতার দেশীয়দের অঞ্চলগুলি বিভিন্ন পেশাভিত্তিক পাড়ায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই ভাবেই শুঁড়িপাড়া, কলুটোলা, ছুতারপাড়া, আহিরীটোলা ও কুমারটুলি প্রভৃতি অঞ্চলের উৎপত্তি ঘটে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে বড়বাজার অঞ্চলের আগ্রাসনের শিকার হয়ে উত্তর কলকাতার মৃৎশিল্পীরা শহর ছেড়ে চলে যান। কিন্তু কুমোরটুলির পটুয়ারা, যাঁরা গঙ্গামাটি সংগ্রহ করে মাটির পাত্র ইত্যাদি তৈরি করে সুতানুটি বাজারে (অধুনা বড়বাজার) বিক্রি করতেন, তাঁরা টিকে যান। পরবর্তীকালে তাঁরা ধনী সম্প্রদায়ের বাড়ির পূজার নিমিত্ত দেবদেবীর প্রতিমা নির্মাণ করতে শুরু করেন। কলকাতা ও বাইরে বারোয়ারি বা সার্বজনীন পূজার প্রচলন হলে পূজাকমিটিগুলি কুমারটুলি থেকে প্রতিমা সংগ্রহ করতে থাকেন। কলকাতার ইতিহাস নিয়ে যারা আগ্রহী তাদের কাছে, পর্যটকদের কাছে এবং শিল্প রসিকদের কাছে কলকাতার অন্যতম বেড়ানোর জায়গা এই অঞ্চলটি।
সূত্র: পোর্টাল কনটেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/24/2020