দেশকালীমাতার মন্দির, মঠ আর রথযাত্রা নিয়ে গুপ্তিপাড়া এক জমজমাট তীর্থস্থান। হপ্তাশেষের বেড়ানোরও জায়গা।
হাওড়া থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরত্বে ব্যান্ডেল-কাটোয়া লাইনের স্টেশন গুপ্তিপাড়া। হাওড়া থেকে ট্রেনে গুপ্তিপাড়া পৌঁছতে ট্রেনে দু’ ঘণ্টারও কম সময় লাগে। স্টেশন থেকে হেঁটে বাঁ রিকশায় আসা যায় বড়বাজার পার হয়ে দেশকালীমাতার মন্দিরে। শ্যামাপূজার দিন নতুন মাটির মূর্তি এনে পুজো করা হয়। পরের শুক্লা দ্বিতীয়ার দিন মূর্তির কেশ, কাঁকন, কেউর, কপোল প্রভৃতি কেটে নিয়ে বাকি মূর্তি গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়া হয়। খণ্ডিত অংশগুলো একটা আধারে রেখে সারা বছর তান্ত্রিক মতে নিত্যপূজা করা হয়। দেশকালীমাতাই গুপ্তিপাড়ার অধিষ্ঠাত্রী দেবী।
গুপ্তিপাড়ার প্রধান উৎসব হল রথযাত্রা। ৪০০ বছরের প্রাচীন বৃন্দাবনচন্দ্রের রথযাত্রা। মঠের মঠের সামনে থেকে বাজার পর্যন্ত দীর্ঘ এক মাইল পথের দু’ ধারে মেলা বসে। উল্টোরথের আগের দিন ‘ভাণ্ডারলুট’ উৎসব খুব ধুমধাম করে পালিত হয় এখানে। প্রথামতো ভোগ নিবেদন করার পর ভক্তরা ভোগ লুট করে নেয়। পশ্চিমবাংলার সব চেয়ে প্রাচীন ও বড় রথগুলির মধ্যে গুপ্তিপাড়ার রথ অন্যতম।
বৃন্দাবনচন্দ্র ছাড়াও রয়েছে চৈতন্য, রামচন্দ্র এবং কৃষ্ণচন্দ্রের মন্দির। বাংলার স্থাপত্য শিল্পের অদ্ভুত নিদর্শন আজও বহন করে চলেছে গুপ্তিপাড়ার ৪টি বৈষ্ণব মন্দির। আর এই চার মন্দিরের সমষ্টিকে বলা হয় গুপ্তিপাড়ার মঠ। এই ৪ মন্দিরের নির্মাণকাল ভিন্ন। গুপ্তিপাড়া এখনও বৈষ্ণব সংস্কৃতির দ্বারা ভালোই প্রভাবিত। রথযাত্রা ছাড়া স্থানীয় মানুষ যথেষ্ট উদ্যমের সঙ্গে রাস, দোলও পালন করে চলেছে। গুপ্তিপাড়াতেই প্রথম বারোয়ারি দুর্গাপুজোর প্রচলন হয়। সেন রাজাদের বাড়ির দুর্গাপুজোয় অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ১২ জন ব্রাহ্মণ একটি সংগঠন তৈরি করে ১৭৬১ সাল থেকে সূচনা করেন বারোয়ারি দুর্গাপূজার।
এখানকার অধিবাসীদের দাবি, বাংলার মিষ্টি শিল্পেরও সূচনা হয়েছিল এই গুপ্তিপাড়াতেই। এখানেই সবার প্রথম আবিষ্কার হয়েছিল মাখা সন্দেশ। আর সেই মিশ্রণকে আকার দিয়ে তৈরি হয় ‘গুপো’ সন্দেশ। । বাংলার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বিশ্বস্ত সেনাপতি মোহনলালের জন্মস্থানও এই গুপ্তিপাড়া।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/27/2020