শোনা যায়, একবার তালুকের কিছু প্রজা খাজনা দিতে বেঁকে বসে। টাকির রায়চৌধুরী জমিদার নদীপথে ৭ নৌকা ভর্তি লাঠি পাঠিয়েছিলেন ওই এলাকায়। তা দেখেই বিদ্রোহী প্রজারা রণে ভঙ্গ দেয়। টাকির হাওয়া-বাতাসে এমন জমিদারি মেজাজের গল্প ভাসে। দেশভাগের যন্ত্রণা বুকে নিয়ে ১৯৪৭ সালের পরে অনেকেই ও পার বাংলা থেকে চলে এসেছিলেন এ পারে। টাকি-হাসনাবাদ-বসিরহাটের নতুন করে সংসার পাতেন তাঁদের অনেকেই। তারপর থেকেই টাকির পরিবর্তনেরও শুরু। বিশেষ করে, পর্যটনকে সামনে রেখে দানা বাঁধতে থাকে আধুনিক টাকি শহর। ৮০ কিলোমিটার দূর কলকাতা থেকে। শিয়ালদা থেকে মাত্র দু’ঘন্টার ট্রেন জার্নি করলেই পৌঁছে যাবে টাকি। ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের এই ছোট্ট আধা শহরটি ইছামতী নদীর তীর ধরে গড়ে উঠেছে। নদীর ঠিক ওপারেই বাংলাদেশ, আর দুর্গাপুজোর সময় দুই দেশের ঠাকুর বিসর্জন বেশ দেখার মতো একটা ব্যাপার। তবে বছরের যে-কোনও সময়ই নদীর বাঁধানো পাড়ে বসে সময় কেটে যেতে পারে। রাত্তিরবেলা, বিশেষ করে পূর্ণিমা রাতে ইছামতী রীতিমতো দর্শনীয়। সাধারণত লেকে বোটিং করে বা কাছের মাছরাঙা দ্বীপ দেখতে যায়, তবে একটু অন্যরকমভাবে ঘুরতে চাইলে নদীর বাঁক ধরে পায়ে হেঁটে বেড়ানোই বেস্ট। থাকা-খাওয়ার অনেক ব্যবস্থা আছে। আছে পুরসভার অতিথিশালা। ভ্যানরিকশায় বেড়িয়ে পড়ো টাকি ভ্রমণে। এখানকার একটা রাস্তা মোগলসম্রাট আকবরের সেনাপতি মান সিং-এর নামে। ওই পথেই নাকি মান সিং টাকি আক্রমণ করেছিলেন। একটা স্মারকও বসেছে ওই পথে। রাজবাড়ির দুর্গাদালানটি দেখার মতো। ছোট গোলাকার ইটে তৈরি দালান। টাকি সরকারি কলেজের সামনে দিয়ে হাসনাবাদের দিকে যেতে পড়ল কুলেশ্বরী কালীবাড়ি, রামকৃষ্ণ মিশন। এই মিশন ১৯৩১-এ প্রতিষ্ঠিত। এখানকার মন্দিরটির অনেকটা বেলুড় মঠের মতো আদল। দিঘির পাড়ে জোড়া শিবমন্দির, ৩০০ বছরের পুরনো। নদীর তীর ছুঁয়ে গ্রামের ভিতর ঢুকে জালালপুরের নন্দদুলাল মন্দির। বৈশাখের অক্ষয় তৃতীয়ায় তিন দিনের মেলা বসে মন্দিরের সামনের মাঠে। সইদপুরে দেখা যাবে ভারতের প্রাক্তন সেনাধ্যক্ষ জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরীর বসতভিটে। ইছামতীর অন্য পারে বাংলাদেশের শ্রীপুর, পশ্চিমবঙ্গের রূপকার বিধানচন্দ্র রায়ের পৈতৃক গ্রাম। এই ভাবেই সপ্তাহ শেষের দিনটা কেটে যায় ইছামতীর পাড়ে।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/26/2020