আলিপুরদুয়ার থেকে সোজা পথ বক্সা মোড়। সেখান থেকে পথ দু’ ভাগ – সোজা পথ গেছে বক্সাদুয়ার, ডান হাতি পথ গেছে জয়ন্তী। ট্রেনে আলিপুরদুয়ার পৌঁছে গেলে বক্সা পৌঁছনো কোনও ব্যাপারই নয়।
উত্তরবঙ্গের প্রবেশপথ শিলিগুড়ি থেকে ১৭৫ কিলোমিটার দূরে বক্সা অরণ্য। সিনচুলা পাহাড়ে ৮৬৭ মিটার উঁচুতে বক্সাদুয়ার –- ভুটান যাওয়ার পথে বক্সা ফোর্ট যেন পাহারাদার। এই বক্সা ফোর্টেই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আটকে রাখত ব্রিটিশ। সেই বক্সার নামে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প। বক্সার অবস্থান এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়, একেবারে আন্তর্জাতিক সীমান্তে। কারণ ব্যাঘ্র প্রকল্পের উত্তর সীমানায় ভুটান, সেখানকার সিনচুলা পাহাড়শ্রেণি আর ফিপসু বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। ব্যাঘ্র প্রকল্পের পুবে অসম, সেখানকার মানস জাতীয় উদ্যান। প্রকল্পের ডান সীমানা ঘেঁষে ছুটে গেছে জাতীয় সড়ক ৩১ সি, আর উত্তর-পশ্চিম দিকে চিলাপাতা অরণ্য। অনন্য অবস্থিতির জন্যই বক্সা আজ হাতি চলাচলের আন্তর্জাতিক করিডোর।
বক্সা পাহাড়ের পাদদেশে ৭৬০.৮৭ বর্গ কিলোমিটারের বক্সা সংরক্ষিত বনভূমি ২৬৯ বর্গ কিলোমিটার অভয়ারণ্য। তার মধ্যে আবার ১১৭.০১ বর্গ কিলোমিটার জাতীয় উদ্যানের শিরোপা পেয়েছে। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প ঘোষিত হয় ১৯৮৪ সালে। রাজাভাতখাওয়া, নিমাটি, বারবিশা, রায়ডাক, রায়মাটাং, জয়ন্তী, বক্সাদুয়ার আর ভুটানঘাট --- এই আটটি বনাঞ্চল নিয়ে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প। সঙ্কোশ, রায়ডাক, জয়ন্তী, টুরটুরি, চুরনিয়া, ফাঁসখোয়া, নিমা আর নোনানি নদী বয়ে গেছে এই অরণ্যভূমির উপর দিয়ে।
নানা ধরনের গাছ, গুল্ম, বনৌষধি, তরুলতা, অর্কিড আছে এই সংরক্ষিত জঙ্গলে। আছে বাঁশ আর বেতের গাছও। হাতি, গাউর, নানা প্রজাতির হরিণ, বনশুয়োর, লেপার্ড, বাঘ লেপার্ড ক্যাট, ক্লাউডেড লেপার্ড, বুনোকুকুর, বনবিড়াল ইত্যাদির প্রাণীর বাস বক্সা।
ঘুরতে-ঘুরতে দেখতে পার বক্সা ফোর্টের ধ্বংসাবশেষ। জঙ্গলের মধ্যে পুরনো মহাকালেশ্বর মন্দিরও বেশ দেখার মতো বটে। দল বেঁধে জয়ন্তি নদী দেখে আসতে পারো, নদীর স্রোতের সঙ্গে-সঙ্গে মন জুড়িয়ে যাবে প্রচুর পাখি দেখে।
ইচ্ছা করলে তোমরা দু’ একটা দিন কাটাতে পারো এই জঙ্গলে। রাতে থাকার জন্য রাজাভাতখাওয়া, নিমাটি, বারবিশা, রায়ডাক, রায়মাটাং, জয়ন্তী আর ভুটানঘাটে বনবাংলো আছে।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/29/2020