নদিয়া একটি ঐতিহাসিক অঞ্চল। ১৭৮৭ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্বকালে জেলা হিসেবে নদিয়ার আত্মপ্রকাশ। সে সময় বর্তমান হুগলি ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কিছু অংশ এই জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট সাময়িকভাবে এই জেলা পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। তিন দিন বাদে ১৮ অগস্ট কিয়দংশ বাদে নদিয়া পুনরায় ভারত অধিরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি নদিয়া জেলা তার বর্তমান রূপটি লাভ করে। ১৯৪৭ সালে সাময়িকভাবে জেলার নামকরণ নবদ্বীপ করা হলেও অনতিবিলম্বেই সেই নামকরণ বাতিল হয়।
নদিয়া মূলত একটি কৃষিপ্রধান জেলা। হুগলি শিল্পাঞ্চলের কিয়দংশ এই জেলায় অবস্থিত। আবার স্বাধীনতার পর কল্যাণী নগরীকে কেন্দ্র করে আরও একটি শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠেছে এই জেলায়। এছাড়া ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পেও এই জেলার বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। বাঙালি হিন্দু সমাজে নদিয়া জেলা গৌড়ীয় বৈষ্ণব আন্দোলনের প্রাণপুরুষ চৈতন্য মহাপ্রভুর স্মৃতিবিজড়িত।
পশ্চিমবঙ্গের এই নদিয়া জেলারই অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র বেথুয়াডহরি।
বেথুয়াডহরি সংরক্ষিত অভয়ারণ্য ৬৭ হেক্টরের বনভূমি --- কলকাতা থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে, উত্তরবঙ্গগামী ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের বাঁ দিকে। এখানে নাকি বেথো (বেথুয়া) শাকের জলাভূমি (ডহর) ছিল। তা থেকেই নাম বেথুয়াডহরি।
১৯৫৮-৫৯ সালে এই বনভূমির সৃজনকাজ শুরু হয়। ১৯৮০ সালে সরকারিভাবে বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষিত হয়।
সংরক্ষিত বনের ফটক দিয়ে ঢুকতেই প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্র, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নামে নামাঙ্কিত। শাল, সেগুন, মেহগনি আর অর্জুনের মতো পরিচিত গাছের জঙ্গলে গাঁ জড়াজড়ি করে মিশে আছে গাব, টুন, নাগকেশর, পিয়াশাল, হামজাম ইত্যাদি। এমনকী কবি জীবনানন্দের প্রিয় গাছ হিজলও আছে।
বনপথটি ইটবাঁধানো। পথের দু’ধারে বৃক্ষসারি যেন মাথায় ছাতা ধরে থাকে। বনপথ তাই ছায়াপথ। পথ সোজা নিয়ে আসে তিন রাস্তার মোড়ে – বাঁ দিকে ঘড়িয়াল পুকুর আর ডান দিকে কচ্ছপের পুকুর।
ঘড়িয়াল পুকুরের আবাসিক অনেকেই, নানা মাপের। কেউ কেউ ডাঙায় রোদ পোহায়, আবার কেউ কেউ জল থেকে মাথা বের করে রাখে শিকারের সন্ধানে। বেথুয়ার এই জঙ্গলে আছে চিতল হরিণ, শজারু, মেছোবিড়াল, বনবিড়াল, বুনো খরগোশ, বেজি, ভাম ইত্যাদি। আছে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, ময়ূর, বাজ, পেঁচাও। তা ছাড়া বেথুয়াডহরি বিখ্যাত তার বিভিন্ন প্রজাতির প্রজাপতির জন্য।
শিয়ালদহ থেকে সরাসরি ট্রেনে আসা যায় বেথুয়া। স্টেশন থেকে রিকশায় অভয়ারণ্যের ফটকে। জঙ্গলের ভিতরে বনবাংলোয় রাত কাটানো যায়। বেথুয়া বাজারেও অবশ্য থাকার হোটেল আছে। এ ছাড়া কৃষ্ণনগরে রাত কাটিয়ে ট্রেনে বা বাসে আসা যায় বেথুয়ায়।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 8/26/2019
বেথুয়াডহরি সংরক্ষিত অভয়ারণ্য ৬৭ হেক্টরের বনভূমি --...