আড়াইশো বছরের এক গৌরবময় ইতিহাসের পাঠ নিতে এক দিন চলো বাংলার কাশী শিবনিবাসে। কৃষ্ণনগর থেকে কৃষ্ণগঞ্জ হয়ে সড়কপথে শোনঘাটা। শোনঘাটা পেরোতেই ডান দিকে নজরে পড়বে যাত্রীছাউনি, ‘বাসযাত্রী বিশ্রামাবাস, শিবনিবাস’। ডান দিকের পথ ধরে চলে এসো নদীর পারে। নৌকা থাকবে ঘাটে। নিয়মিত পারাপার চলছে। নদী পেরিয়ে চলে এসো শিবনিবাসে। আরও এক ভাবে আসা যায় এখানে। শিয়ালদহ থেকে গেদে প্যাসেঞ্জারে কৃষ্ণনগর পেরিয়ে তারকনগর হল্ট। সেখান থেকে রিকশায় শিবনিবাস।
নদীর ঘাট থেকেই নজরে পড়ে সুউচ্চ মন্দিরের চুড়ো। সামান্য হাঁটাপথ। গুটিগুটি পায়ে চলে এসো মন্দির প্রাঙ্গণে। একেবারে ডান দিকের মন্দিরটি সব চেয়ে উঁচু --- ১৬৭৬ শকাব্দ তথা ১৭৫৪ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত রাজরাজেশ্বর শিবমন্দির। লোকমুখে বুড়ো শিবের মন্দির বলে খ্যাত। চুড়ো সমেত এই মন্দিরের উচ্চতা ১২০ ফুট, আটকোনা মন্দির, প্রতিটি কোনায় মিনার ধরনের সরু থাম। এক ঝলক দেখলে গির্জা বলে মনে হয়। মন্দিরের ভিতর কালো শিবলিঙ্গ, উচ্চতা ১১ ফুট ৯ ইঞ্চি, বেড় ৩৬ ফুট। সিঁড়ি দিয়ে উঠে শিবের মাথায় জল ঢালতে হয়। পূর্ব ভারতে এতো বড় শিবলিঙ্গ আর নেই। পথের ডান দিকে যা মন্দির, সেটির নির্মাণ ১৭৬২-তে। বর্গাকার প্রস্থচ্ছেদের মন্দির। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের দ্বিতীয় মহিষীর প্রতিষ্ঠিত এই মন্দিরের ‘রাজ্ঞীশ্বর’ সাড়ে ৭ ফুট উঁচু। পথের বাঁ দিকে রামসীতা মন্দির। পশ্চিমমুখী চার চালা মন্দির। শিখরে ৪টি মিনার।
শিবনিবাসে যা ছিল এ তার অতি সামান্য নিদর্শন। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র বর্গী হামলার সময় এখানে রাজধানী সরিয়ে আনেন। আর তাদের হাত থেকে রাজধানীকে রক্ষা করতে খাল কাটলেন। সেই খাল জুড়ল দুই নদীকে, ইছামতী আর চূর্ণি। সেই খাল আজকের কংকনা নদী, যে নদী পেরিয়ে এসেছ এই শিবনিবাসে। ১০৮ শিবের বসত ছিল এই শিবনিবাস। লোকে বলত, “শিবনিবাস তুল্য কাশী, ধন্য নদী কংকনা”। ছিল রাজপ্রাসাদও। মাত্র তিনটি মন্দির টিকে আছে। বাকি সব ধ্বংস, যার চিহ্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শিবনিবাসে।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 9/12/2019