হুগলি পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলা। হুগলি নদীর নামে এর নামকরণ । বর্ধমানের দক্ষিণাংশকে বিচ্ছিন্ন করে ১৭৯৫ সালে ইংরেজরা প্রশাসনিক কারণে হুগলি জেলা তৈরি করে ছিল। হাওড়া তখনও হুগলি জেলার অংশ ছিল। জেলা বলতে কতগুলি থানার সমষ্টি। মহকুমার ধারণা তখনও জন্ম নেয়নি। এই জেলার দক্ষিণাংশ নিয়ে হাওড়া স্বতন্ত্র জেলা হিসাবে দেখা দিয়েছিল ১৮৪৩ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি। ১৮৭২ সালের ১৭ই জুন ঘটল ও চন্দ্রকোনা থানা মেদিনীপুরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। প্রাচীনকালে সুহ্ম বা দক্ষিণ রাঢ়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল হুগলি জেলা। নদী, খাল, বিল অধ্যুষিত এই অঞ্চল ছিল কৈবর্ত ও বাগদিদের আবাসস্থল। এদের উল্লেখ রয়েছে রামায়ন, মহাভারত, মনুসংহিতা এবং পঞ্চম অশোকস্তম্ভ লিপিতে। মৎস্য শিকারই ছিল এদের প্রধান জীবিকা। এই হগলি জেলারই অন্যতম পর্যটনস্থল সুখাড়িয়া।
কলকাতা থেকে দু’ পা দূরে না হলেও মাত্র ৮০টি কিলোমিটারই দূরে জায়গাটা। নামতে হবে সোমড়াবাজার স্টেশনে। সেখান থেকে রিকশা। আদতে একটা ছোট্ট গ্রাম, কিন্তু স্থাপত্যের ইতিহাসের দিক থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ নয় সুখাড়িয়া। টেরাকোটার তিনটে অপূর্ব মন্দির। তোমাদের মধ্যে যারা ইতিহাস ও স্থাপত্য নিয়ে চর্চা করতে ভালোবাস, তাদের যথেষ্ট আকৃষ্ট করবে। এগুলির মধ্যে সব থেকে নজরকাড়া হল ১৮১৩ সালে তৎকালীন জমিদার বীরেশ্বর মিত্রমুস্তৌফির তৈরি আনন্দময়ী মন্দির। জমিদারিবাড়ি পেরিয়ে মন্দিরের অঙ্গন। মন্দিরের সামনে সুপ্রশস্ত উঠোন, পাশে সারি সারি শিবমন্দির। অন্য দিকে প্রশস্ত দিঘিটি জল টলটলে। স্থাপত্যে ও ভাস্কর্যে অতুলনীয় আনন্দময়ী মন্দির বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ। এই মন্দির বারো চালার। মন্দিরটির চাল তিনটি স্তরে বিন্যস্ত। মোট ২৫টি শিখর। চার চালার প্রথম স্তরে ১২টি, দ্বিতীয় স্তরে ৮টি, তৃতীয় স্তরে ৪টি এবং মধ্যস্থলে বৃহত্তম রত্ন বা শিখর। মন্দিরের স্তম্ভ, খিলান, শীর্ষ ও বাইরের দেওয়ালে পোড়ামাটির অলঙ্করণ। কাছেই নিস্তারিণী কালীর পশ্চিমদুয়ারি নবরত্ন মন্দির ও হরসুন্দরী কালিকা মন্দির। শোনা যায় ভূমিকম্পে এই মন্দিরের কয়েকটি চুড়ো ভেঙে গেলে পরবর্তী বংশধরেরা সেগুলোর সংস্কার না করে সব চুড়ো ভেঙে সমান ছাদ করে দেন। সুখাড়িয়ার ঘাট থেকেই নৌকা করে যাওয়া যায় সবুজ দ্বীপে – গঙ্গার মাঝে জেগে ওঠা চরে এখন সবুজের রাজত্ব। শীতে আসে নানা পরিযায়ী পাখি আর পিকনিক পার্টি।
রাত্রিবাসের বিশেষ সুবিধা নেই সুখাড়িয়া বা তার আশেপাশে। তাই দিনে দিনে বেড়িয়ে আসাই ভালো।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/16/2020