কলকাতা থেকে ২১২ কিলোমিটার উত্তরে বীরভূম জেলার বোলপুরের কাছে একটি ছোট শহর শান্তিনিকেতন। এই দূরত্ব অবশ্য পানাগড় ঘুরে। বর্ধমান থেকে গুসকরা দিয়ে দূরত্ব পড়ে ১৬০ কিলোমিটারের কাছাকাছি। ট্রেনে হাওড়া থেকে বর্ধমান হয়ে বোলপুর-শান্তিনিকেতন ঘণ্টা তিনেকের জার্নি।
এই শহরটিকে বিখ্যাত করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার স্বপ্নের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় আজ শান্তিনিকেতনকে একটি বিশ্ববিদ্যালয় শহরে পরিণত করেছে। প্রতি বছর এখানে হাজার হাজার পর্যটক আসেন।
শান্তিনিকেতনের আগের নাম ছিল ভুবন ডাঙা (স্থানীয় ভুবন ডাকাতের নামানুসারে), এটি ছিল ঠাকুর পরিবারের সম্পত্তি। ১৮৬২ সালে রায়পুরের পথে যেতে যেতে কবির পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর লাল মাটির এই অঞ্চল এবং ধান ক্ষেত দেখতে পান। দেখেই চোখ জুড়িয়ে যায় তাঁর। এই জায়গাই ঈশ্বরের উপযুক্ত আরাধনাস্থল ভেবে তিনি রায়পুরের জমিদারের কাছ থেকে ২০ বিঘা জমি কিনে নেন। তার পর তিনি সেখানে আরও গাছ লাগানো ও বাড়ি তৈরির মনস্থ করেন। বাড়ি তৈরি হয়। সেই বাড়িটির নাম দেন শান্তিনিকেতন এবং সেখানে থাকতে শুরু করেন। ১৮৬৩ সালে তিনি সেখানে একটি আশ্রম তৈরি করেন এবং ব্রাহ্ম সমাজের সূত্রপাত ঘটান।
১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে প্রাচীন গুরুকুল ব্যবস্থার আদলে ব্রহ্মচারী আশ্রম নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার পাওয়ায় শুধু ভারতেরই সম্মান বৃদ্ধি হয়নি, সম্মান বাড়ে শান্তিনিকেতনেরও। ফলাফল হিসেবে শান্তিনিকেতন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। এর নাম হয় বিশ্বভারতী। গুরুদেবের ভাবনায় যেখানে গোটা পৃথিবী এক সঙ্গে বসবাস করবে।
শান্তিনিকেতনের ক্যাম্পাস জুড়ে রবীন্দ্রনাথ, নন্দলাল বসু, রামকিঙ্কর, বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের অসংখ্য চিত্র, ভাস্কর্য, ম্যুরাল, ফ্রেস্কো ছড়িয়ে রয়েছে।
শান্তিনিকেতনকে নিবিড় ভাবে অনুভব করতে হলে হেঁটে ঘুরলেই ভালো হয়। মূল গেটের বাঁ দিকে প্রথমেই পড়বে হিন্দিভবন, চিনাভবন এবং ডান দিকে বিদ্যাভবন। গাছের ছায়াঘেরা পথে এগোতেই চোখে পড়বে মহর্ষির সাধনবেদী ও ছাতিমতলা। ছাতিমতলার ডান দিকে যে বড় বাড়িটি দেখা যায়, সেটিই হল শান্তিনিকেতন গৃহ। এর অদূরেই রঙিন কাচের উপাসনা মন্দির। এর কাছেই তালধ্বজ, একটি তালগাছকে কেন্দ্র করে গোলাকৃতি খড়ের বাড়ি। হিন্দিভবন, চিনাভবনের কাছাকাছি আম্রকুঞ্জ, রবীন্দ্রনাথের বাড়ি দেহলি, পরে নতুন বাড়ি শালবীথি অবস্থিত। দেহলির বর্তমান নাম মৃণালিনী আনন্দ পাঠশালা। পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলেই পড়বে বিস্তৃত গৌরপ্রাঙ্গণ। গৌরপ্রাঙ্গণের দক্ষিণে সিংহসদন, উপরে একটি ক্লক টাওয়ার আছে। এই বাড়িতেই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ৭ আগস্ট রবীন্দ্রনাথকে ডি লিট উপাধি দিয়েছিল। এর পর কাছাকাছি চৈত্য, কালোবাড়ি, শ্রীসদন, সংগীতভবন, কলাভবন ইত্যাদি।
এ বার আসা যাক শান্তিনিকেতনের মূল আকর্ষণ ‘উত্তরায়ণ’-এ। রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন সময়ের আবাস। ‘উত্তরায়ণ’-এ ঢুকেই বাঁ দিকে বিচিত্রাভবন বা এক কথায় রবীন্দ্র মিউজিয়াম। এখান থেকে বেরিয়ে একে একে পড়বে উদয়ন, কোনার্ক, শ্যামলী, পুনশ্চ, উদীচী ইত্যাদি। উদয়নে রবীন্দ্রনাথের ঘরটি একই ভাবে সাজানো। ‘উত্তরায়ণ’ বুধবার বন্ধ, কারণ ওই দিন বিশ্বভারতীতে ছুটি।
শান্তিনিকেতনের কাছেই শ্রীনিকেতন, সুরুল গ্রাম, বল্লভপুর ডিয়ার পার্ক ইত্যাদি দেখে আসতে ভুলো না।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/16/2020
এই প্রতিবেদনে শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসবের ইতিহাস, স...
লাল মাটির দেশে দেখার মতো জায়গার অভাব নেই। কিন্তু ক...
এই বিষয়টি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত শান...