কলকাতাকে মেলার শহর বললে অত্যুক্তি হয় না। বইমেলা, হস্তমেলা, বাণিজ্যমেলা ও আরও নানা মেলায় সে এক হট্টমেলার শহর। লক্ষ লক্ষ মানুষের উৎসাহ আর উদ্দীপনার অন্ত নেই এই সব মেলাকে ঘিরে। কিন্তু এ সবই হাল আমলের, বড় জোর দশ-বিশ-ত্রিশ বছরের। প্রচারের আলোয় তেমন ভাবে উদ্ভাসিত না হলেও দু’শো বছরের স্মৃতিবিজড়িত বড়িশার চণ্ডীমেলা তেমনই এক পুরনো মেলা। বলা বাহুল্য সে দিনের কলকাতা আজকের মেট্রোপলিস নয়, আর বড়িশাও তখন কলকাতার অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ১৬৯৮ সালে সাবর্ণ রায়চৌধুরী তৎকালীন কলিকাতা, সুতানুটি, গোবিন্দপুর গ্রাম তিনটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বিক্রি করেন। এই রায়চৌধুরীদের কাছরিবাড়ি ছিল বড়িশায়। বর্তমানে যা বেহালা শখের বাজারের সন্নিহিত অঞ্চল। বাংলা তথা কলকাতার বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী এই বড়িশা। কথিত, রায়চৌধুরী পরিবারের দুর্গামণ্ডপের আটচালায় বসেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে কলকাতা হস্তান্তরের দলিল লেখা হয়েছিল।
চণ্ডীমেলা কমিটির মতে, সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের বংশধর মহেন্দ্র রায়চৌধুরী বড়িশায় চণ্ডীপূজার প্রবর্তন করেন ১৭৯৩ সালে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বছরে। নিত্যদিনের পূজার্চনা ছাড়াও শারদীয়া দুর্গোৎসবের ২ মাস পরে অষ্টমী থেকে দশমীতে হয় বাৎসরিক চণ্ডীপুজো। এই পুজোকে কেন্দ্র করেই বসে ১০ দিনের মেলা। বাৎসরিক পুজো উপলক্ষে আলাদা করে মূর্তি বানানো হয়। মেলায় অতীত ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার মেলবন্ধনে পরিবেশিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গুণীজন সংবর্ধনার মতো অনুষ্ঠানের সঙ্গে থাকে নরনারায়ণ সেবা, কম্বল ও কাপড় বিতরণের মতো দুঃস্থদের সাহায্যের আয়োজন। মেলার এক একটি দিন নির্দিষ্ট হয় প্রতিবন্ধী, মহিলা ও শিশু দিবস হিসেবে।
মেলায় থাকে বিভিন্ন সরকারি দফতরের স্টল, অন্যান্য দোকান, নাগরদোলা ও শিশু বিনোদনের উপকরণ। বাকি সব ছোটখাটো দোকান রাস্তা ধরে ঢুকে পড়ে এ গলি, ও গলিতে। এ ছাড়া থাকে খাবার, খেলনা, পুতুল, বাসন, ইমিটেশনের দোকান। বিকিকিনি ভালোই হয়। মেলার অন্যতম আকর্ষণ পুতুল নাচের আসর। দশ দিনই হয় পুতুল নাচের শো। এই মেলাকে ঘিরে বড়িশাবাসীর আগ্রহ ও উদ্দীপনা থাকে চোখে পড়ার মতো। প্রণামী বাবদ আয় হয় কয়েক লক্ষ টাকা।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/13/2019