আবু ইসহাক (১৯২৬-২০০৩) কথাসাহিত্যিক, অভিধান-প্রণেতা। জন্ম তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের শরিয়তপুর জেলার শিরঙ্গল গ্রামে, ১৯২৬ সালের ১ নভেম্বর। তাঁর পিতা মোহাম্মদ এবাদুল্লাহ, মাতা আতহারুন্নিসা।
আবু ইসহাক নড়িয়া থানার উপসী বিজারি তারাপ্রসন্ন ইংরেজি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৪২ সালে মাধ্যমিক, ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজ থেকে ১৯৪৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক এবং করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬০ সালে বি এ পাস করেন।
আবু ইসহাক প্রথমে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শক পদে যোগদান করেন। দেশ বিভাগের পরে ১৯৪৯ সালে তিনি পুলিশ বিভাগে সহকারি পরিদর্শক হন এবং ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত তিনি করাচি, রাওয়ালপিন্ডি ও ইসলামাবাদে কর্মরত ছিলেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে তিনি ঢাকায় এসে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার উপ-পরিচালক হন। পরের বছর বর্মার আকিয়াবে বাংলাদেশ সরকারের দূতাবাসে ভাইস-কনসাল এবং ১৯৭৬ সালে কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের প্রথম সেক্রেটারি পদে নিয়োগ লাভ করেন। ১৯৭৯ সালে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার খুলনা বিভাগের প্রধান হয়ে ১৯৮৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত নবযুগ পত্রিকায় আবু ইসহাকের ‘অভিশাপ’ নামে একটি গল্প প্রকাশিত হয়। পরে কলিকাতার সওগাত, আজাদ প্রভৃতি পত্রিকায় তাঁর বিভিন্ন রচনা প্রকাশিত হয়। বিশ্বযুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দেশবিভাগ প্রভৃতি পর পর চারটি বড় ঐতিহাসিক ঘটনার পটভূমিতে তিনি রচনা করেন ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ (১৯৫৫)। উপন্যাসটি প্রকাশিত হলে এর রচনাশৈলী ও বিষয়বস্তু পাঠকদের আকৃষ্ট করে। লেখক দেখিয়েছেন পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলেও গ্রামের শ্রমজীবী মানুষের আর্থিক পরিবর্তন আনতে পারেনি। দুর্ভোগ বেড়েছে। ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’র চলচ্চিত্রায়ন হয় এবং উপন্যাসটি একাধিক ভাষায় অনুদিত হয়।
আবু ইসহাকের দ্বিতীয় উপন্যাস ‘পদ্মার পলিদ্বীপ’ (১৯৮৬)। এ উপন্যাসে পদ্মার বুকে জেগে-ওঠা চরের শ্রমজীবী মানুষের জীবন-সংগ্রামের কথা আছে। দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে এ উপন্যাস রচিত হলেও লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি অপরিবর্তিত থেকেছে।
তাঁর তৃতীয় উপন্যাস ‘জাল’। এটি গোয়েন্দা জাতীয় উপন্যাস। তাঁর প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ দুটি হারেম (১৯৬২) ও মহাপাত্র (১৯৬৩)। তাঁর রচিত একমাত্র নাটক ‘জয়ধ্বনি’। তাঁর স্মৃতিচারণমূলক রচনা স্মৃতিবিচিত্রা প্রকাশিত হয় ২০০১ সালে।
অভিধান প্রণেতা হিসেবেও আবু ইসহাকের একটি বিশিষ্ট পরিচয় আছে। তিনি সমকালীন বাংলা ভাষার অভিধান (২ খণ্ড, ১৯৯৩, ১৯৯৮) রচনা করে বাংলা কোষগ্রন্থের পরিধিকে বাড়িয়ে তুলেছেন।
সাহিত্যকর্মে অবদানের জন্য আবু ইসহাক প্রচুর পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলা অ্যাকাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৩), একুশে পদক (১৯৯৭) প্রভৃতি।
সূত্র: বাংলাপিডিয়া
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/20/2020