নবীনচন্দ্র সেন (জন্ম ১০ ফেব্রুয়ারি, ১৮৪৭ - মৃত্যু ২৩ জানুয়ারি, ১৯০৯) বাংলা সাহিত্যের এক জন উল্লেখযোগ্য কবি। চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার অন্তর্গত পশ্চিম গুজরার (নোয়াপাড়া) প্রাচীন জমিদার পরিবারে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতার নাম গোপীমোহন রায় এবং মাতার নাম রাজরাজেশ্বরী।
বি.এ. পাশ করার পরে প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ সাট্ক্লিফ এর সুপারিশে নবীনচন্দ্র কলকাতার বিখ্যাত হেয়ার স্কুলে তৃতীয় শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পান। কিছুদিন পরে বেকার হয়ে পড়েন। পরে ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হন। মাত্র একুশ বছর বয়সে তিনি কর্মজীবনে প্রতিষ্ঠিত হন। প্রথমে ১৭ জুলাই ১৮৬৮ বেঙ্গল সেক্রেটারীয়েটের এসিষ্ট্যাণ্ট পদে যোগ দেন। ২৪ জুলাই ১৮৬৯ যশোরে ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর পদে তাঁকে পদায়ন করা হয়। কর্মজীবনে তিনি বাংলা, বিহার, ত্রিপুরার অনেকস্থানে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দুই দফায় মোট প্রায় আটবছর ফেনীতে ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এসময় তিনি অনন্য কর্মদক্ষতায় একটি জঙ্গলাকীর্ণ স্থানকে মনোরম শহরে পরিণত করেন। ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ফেনী হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। যা বর্তমানে ফেনী সরকারি পাইলট হাই স্কুল। প্রায় ছত্রিশ বছর সরকারি চাকুরি করার পরে ১ জুলাই ১৯০৪ অবসর গ্রহণ করেন।
নবীনচন্দ্রের প্রথম কবিতা ‘কোন এক বিধবা কামিনীর প্রতি’ প্রকাশিত হয় ‘এডুকেশন গেজেট’ পত্রিকায়। তখন তিনি এফএ শ্রেণির ছাত্র। তাঁর প্রথম বই ‘অবকাশরঞ্জনী’র প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয় ১২৭৮ বঙ্গাব্দের পয়লা বৈশাখ এবং দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৮৭৮ সালের ২৯ জানুয়ারি।
পলাশির যুদ্ধ (১৮৭৫), রৈবতক (১৮৮৭), কুরুক্ষেত্র (১৮৮৩) এবং প্রভাস (১৮৯৭)। শেষের কাব্য তিনটি আসলে একটি বিরাট কাব্যের তিনটি স্বতন্ত্র অংশ। এই কাব্য তিনটিতে কৃষ্ণচরিত্রকে কবি বিচিত্র কল্পনায় নতুন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। কবির মতে আর্য ও অনার্য সংস্কৃতির সংঘর্ষের ফলে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ হয়েছিল। এবং আর্য অনার্য দুই সম্প্রদায়কে মিলিত করে শ্রীকৃষ্ণ প্রেমরাজ্য স্থাপন করেছিলেন। নবীনচন্দ্রের অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ক্লিওপেট্রা (১৮৭৭), অমিতাভ (১৮৯৫), অমৃতাভ, রঙ্গমতী (১৮৯০) এবং খ্রিস্ট (১৮৮০)।
নবীনচন্দ্র ভগবতগীতার পদ্যানুবাদ করেছিলেন। তাঁর কবিত্ব জায়গায় জায়গায় চমৎকার, কিন্তু কবি এই চমৎকারিত্ব সব জায়গায় বজায় রাখতে পারেননি। এই কারণে এবং কাব্যে বাঁধুনি না থাকায় নবীনচন্দ্রের কবিত্বের ঠিকমতো বিচার করা কঠিন হয়ে পড়েছে। নবীনচন্দ্র কিছু গদ্যরচনাও করেছিলেন। তাঁর আত্মকথা আমার জীবন একটি উপন্যাসের মতো সুখপাঠ্য গ্রন্থ। তিনি ভানুমতী নামে একটি উপন্যাসও রচনা করেছিলেন
সূত্র: উইকিপিডিয়া
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/9/2020