বুদ্ধদেব গুহ (জন্ম জুন ২৯, ১৯৩৬, কলকাতা) এক জন স্বনামধন্য লেখক। বহু বিচিত্রতায় ভরপুর এবং অভিজ্ঞতাময় তাঁর জীবন। ইংল্যান্ড, ইউরোপের প্রায় সমস্ত দেশ, কানাডা, আমেরিকা, হাওয়াই, জাপান, থাইল্যান্ড ও পূর্ব আফ্রিকা তাঁর দেখা। পূর্ব ভারতের বন-জঙ্গল, পশুপাখি ও বনের মানুষের সঙ্গেও তাঁর সুদীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। সাহিত্য-রচনায় মস্তিষ্কের তুলনায় হৃদয়ের ভূমিকা বড় - এই মতে তিনি বিশ্বাসী। 'জঙ্গলমহল' তাঁর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ। তার পর বহু উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি লেখক হিসেবে খুবই অল্প সময়ে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। তাঁর বিতর্কিত উপন্যাস 'মাধুকরী' দীর্ঘদিন ধরে বেস্টসেলার। ছোটদের জন্য তার প্রথম বই - 'ঋজুদার সঙ্গে জঙ্গলে'। আনন্দ পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৭৭ সালে। প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ঋতু গুহ ছিলেন তাঁর স্ত্রী। সুকন্ঠ বুদ্ধদেব গুহ নিজেও একদা রবীন্দ্রসংগীত গাইতেন। পুরাতনী টপ্পা গানে তাঁর দক্ষতা রয়েছে। টিভি এবং চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে তাঁর একাধিক গল্প উপন্যাস।
বুদ্ধদেব সর্ব সময়ের লেখক। কিন্তু লেখাই তাঁর জীবিকা নয়। কৃতী অ্যাকাউন্টেন্ট বুদ্ধদেবকে তাই প্রকাশনা সংস্থার চাহিদা মেটানোর জন্য দু’ হাতে লিখতে হয়নি। নিজস্ব রচনাশৈলীর আশ্রয়ে তিনি যে সব বহুপঠিত, বহুমুদ্রিত ও বহু আলোচিত উপন্যাস এ যাবৎ লিখেছেন, সেগুলি বাংলা সাহিত্যের ধারায় একটি স্বতন্ত্র ঘরানা ও বিশিষ্ট সংযোজন। অরণ্যপ্রেমী ও অরণ্যচারী এই স্রষ্টা আত্মপ্রকাশের লগ্ন থেকেই তাঁর জয়যাত্রা অব্যাহত রেখেছেন। ‘হলুদ বসন্ত’- এর পর আর তাঁকে ফিরে তাকাতে হয়নি। সন্তোষকুমার ঘোষের মতে, ‘নীলাঙ্গুরীয়’র পর বাংলা কথাসাহিত্যে এমনতর প্রেমের উপন্যাস খুব কমই লেখা হয়েছে। শক্তিশালী এই লেখক নরনারীর প্রেমজীবনের অন্তরচিত্র এমন ভাবে এঁকেছেন যে, পাঠকদের দেখার দৃষ্টিভঙ্গিটাই বদলে গেছে। নিবিড় ভালবাসার সংরাগ তাঁর একাধিক প্রেমের উপন্যাসের পটভূমিতে সৃষ্টি করেছে রামধনুর বর্ণচ্ছটা।
আবার শুধু এ জাতীয় উপন্যাসেই নয়, প্রতীকী উপন্যাস কিংবা গোয়েন্দা উপন্যাসেও বুদ্ধদেব সিদ্ধহস্ত। তাঁর প্রতিটি উপন্যাসের পটভূমি জীবন্ত, তাঁর নিজের চোখে দেখা। অবিশ্বাস্য কল্পনা নয়। ফলে পাঠকের সঙ্গে তাঁর সংযোগ গড়ে ওঠে উপন্যাসের প্রথম শব্দ থেকেই। সেই সব বিশ্বস্ত পটভূমি পাঠকদেরই হয়ে যায়।
তাঁর বিখ্যাত উপন্যাসগুলির মধ্যে রয়েছে : হলুদ বসন্ত; খেলা যখন; বিন্যাস; ওয়াইকিকি; অন্বেষ; ভোরের আগে; সন্ধের পরে; পুজোর সময়ে; নগ্ননির্জন, বাতিঘর , কোজাগর, মাধুকরী প্রভৃতি।
সূত্র: উইকিপিডিয়া
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019