বাংলা কথাসাহিত্যের অন্যতম প্রধান কথাকার মাহমুদুল হক। জন্ম ১৯৪০ সালের ১৬ নভেম্বর। পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতে। বাবা সিরাজুল হক ছিলেন অর্থ বিভাগের উপসচিব। মা মাহমুদা ছিলেন গৃহিণী। ১৯৫০ সালে মাহমুদুল হকের বাবা ঢাকায় চলে আসেন। ১০ ভাইবোনের মধ্যে মাহমুদুল হক ছিলেন চতুর্থ। তিনি ১৯৫৭ সালে ঢাকার ওয়েস্ট অ্যান্ড হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৫৯ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। পরবর্তী সময়ে জড়িয়ে পড়েন ব্যবসায়।
দৈনিক 'সংবাদ' এর চাকরি দিয়ে পেশাগত জীবন শুরু করেছিলেন। তিন মাসের মধ্যেই তিনি ছেড়ে দেন সে কাজ। অনুবাদের কাজ করা তাঁর কাছে খুব বাজে ও কঠিন মনে হয়। এর পর শুরু হল ব্যবসার চিন্তা। শেষ পর্যন্ত অলংকারের ব্যবসা শুরু করলেন। ঢাকার বায়তুল মোকাররমে একটা দোকান নিলেন, নাম 'তাসমেন জুয়েলার্স'।
ব্যবসার মতোই কথাসাহিত্যেও মাহমুদুল হক ছিলেন পাকা জহুরি। বাংলাদেশের সমাজের এমন কিছু চরিত্র তিনি তুলে এনেছেন, এমন কিছু চরিত্র তিনি অলংকার গড়ার মতোই সূক্ষ্ম চারুতায় গড়ে তুলেছেন, যা আর কারও পক্ষে সম্ভব হয়নি। তার মধ্যে রয়েছে 'জীবন আমার বোন' এর রঞ্জু, খোকা, নীলাভাবি, 'অনুর পাঠশালা'র অনু, 'নিরাপদ তন্দ্রা'র হিরণ, ইদ্রিস কম্পোজিটর, কাঞ্চন, 'কালো বরফ' এর আবদুল খালেক, রেখা, নরহরি ডাক্তার কিংবা 'প্রতিদিন একটি রুমাল' গল্পগ্রন্থ ও অগ্রন্থিত শতাধিক গল্পের শত শত চরিত্র।
দেশভাগ মাহমুদুল হককে শিকড় থেকে উচ্ছেদ করেছিল। তিনি নিজেও নিজেকে উচ্ছেদ করেছিলেন শিকড় থেকে। ১৯৮২ সালের দিকে চলে গিয়েছিলেন লেখালেখির বাইরে। শুধু লেখালেখি নয়, জাগতিক সব কামনা-বাসনা ও প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি থেকেই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। মাহমুদুল হকের গ্রন্থাকারে প্রকাশিত উপন্যাস 'অনুর পাঠশালা', 'জীবন আমার বোন', 'নিরাপদ তন্দ্রা', 'খেলাঘর', 'কালো বরফ', 'অশরীরী' ও 'মাটির জাহাজ'। প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ 'প্রতিদিন একটি রুমাল', 'মানুষ মানুষ খেলা' ও 'মাহমুদুল হকের নির্বাচিত গল্প'। এ ছাড়া ছোটদের জন্য লেখা তার উপন্যাস 'চিক্কুর কাবুক'। কিছু অনুবাদও করেছিলেন তিনি। প্রকাশিত অনুবাদগ্রন্থ চারটি।
বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৭৭ সালে বাংলা অ্যাকাডেমি পুরস্কার লাভ করেন মাহমুদুল হক। ২০০৮ সালের ২১ জুলাই তিনি মারা যান।
সূত্র: alokitobangladesh.com
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020