মুকুন্দরাম চক্রবর্তী মধ্যযুগের বাঙালি কবি। ধারণা করা হয় তাঁর জন্ম ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম দিকে। তাঁর বিখ্যাত কাব্য চণ্ডীমঙ্গলকাব্য প্রাচীন পাঁচালি রচনার মধ্যে শ্রেষ্ঠ। এর রচনাকাল ১৫৪৪ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময় বলে বিবেচনা করা হয়।
মধ্যযুগের বাঙালি কবিদের সম্পর্কে তথ্য প্রায়ই জনশ্রুতি বা পুরুষানুক্রমিকভাবে প্রাপ্ত কাহিনী, বিশ্বাস বা প্রথার ওপর নির্ভরশীল। এ সম্পর্কে সঠিক তথ্য যাচাই করা অসম্ভব। চন্ডীমঙ্গলের রচয়িতা মুকুন্দরাম এবং অন্যান্য পাঁচালি (বিশেষত দেব-দেবীর মহিমা কীর্তন করে রচিত গাথা) লেখকদের সম্পর্কে তাঁদের রচিত গাথায় যে আত্মজীবনীমূলক তথ্য পাওয়া যায়, সেগুলিই তাঁদের জীবনীর অধিকতর যথার্থ উৎস প্রদান করে। মুকুন্দরামের রচনাবলিতে এরূপ দুটি সংক্ষিপ্ত-বিবরণী (notes) পাওয়া যায়। এসব বিখ্যাত সংক্ষিপ্ত বিবরণী মধ্যযুগের বাঙালি অধ্যুষিত গ্রামের, বিশেষ করে সেসব গ্রামের কৃষি নির্ভরশীল জীবিকা নির্বাহী ব্রাহ্মণ পরিবারের জীবন্ত জীবনচিত্র প্রদান করে।
তিনি রাজা রঘুনাথের সমসাময়িক ছিলেন। রাজা রঘুনাথ তাঁকে কবিকঙ্কন উপাধি প্রদান করেন। তাঁর পূর্ণ নাম হচ্ছে কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী। মুকুন্দরাম তাঁর চন্ডীমঙ্গল কাব্যের নামকরণ করেন অভয়ামঙ্গল। তবে এই রচনাকে কেউ কেউ ' কবিকঙ্কণ চণ্ডী'ও বলেছেন। 'কবিকঙ্কণ' কথার মানে যে কবি হাতে অথবা পায়ে ঘুঙুর পরে গান করতেন। অর্থাৎ মঙ্গলকাব্যের পেশাদার গায়ক।
তিনি তাঁর কাব্যে উপন্যাসের বীজ বপন করেছেন। আধুনিক যুগের সাহিত্য সমালোচকগণ তাঁর সম্পর্কে বলেছেন - ' মুকুন্দরাম চক্রবর্তী মধ্যযুগে জন্মগ্রহণ না করে আধুনিক যুগে জন্মগ্রহণ করলে কাব্য না লিখে উপন্যাস লিখতেন '। যদি এমন কোনও গ্রন্থের নাম করতে হয় যাতে আধুনিক কালের উপন্যাসের রস কিছু পরিমাণে মেলে তা হলে মুকুন্দরামের কাব্যের নাম করতে হয়। এতে যেমন আছে নিপুণ পর্যবেক্ষণ, তেমনই সহৃদয়তা, জীবনে আস্থা, ব্যাপক অভিজ্ঞতা যথোচিত পরিমাণে বর্তমান। মুকুন্দরাম শুদ্ধাচারী বামুন পণ্ডিত ঘরের ছেলে, আজন্ম দেব বিগ্রহ সেবক। কিন্তু তাঁর সহানুভূতি থেকে কেউই বঞ্চিত হয়নি, না বনের তুচ্ছতম পশু, না জনপদের দুর্গমতম মানুষ। সংস্কৃত অলঙ্কার প্রয়োগের পাশাপাশি লোক ব্যবহার, ছেলে ভোলানো, ছেলেখেলা, মেয়েলি ক্রিয়াকাণ্ড, ঘরকন্নার ব্যবস্থা, রান্নাবাড়া ইত্যাদি অনপেক্ষিত সামাজিক ও সাংসারিক ব্যাপারেও বিস্ময়কর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন।
সূত্র: উইকিপিডিয়া
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019