সতীনাথ ভাদুড়ী (১৯০৬ – ১৯৬৫) কথাশিল্পী, রাজনীতিক। তাঁর সাহিত্যিক ছদ্মনাম ‘চিত্রগুপ্ত’। ১৯০৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর বিহারে পিতার কর্মস্থল পূর্ণিয়ায় তাঁর জন্ম। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে। পিতা ইন্দুভূষণ ভাদুড়ী ছিলেন পূর্ণিয়ার আইনজীবী। সতীনাথ পটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ (১৯৩০) পাস করে ওকালতিতে যোগ দেন। এর পর কংগ্রেসের রাজনীতিতে যোগ দিয়ে তিনি পূর্ণিয়ার জেলা কংগ্রেসের সেক্রেটারি হন। চল্লিশ দশকের গোড়ায় দু’ দফায় রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে তিনি ভাগলপুর জেলে আটক ছিলেন। পরবর্তী সময়ে কর্মপদ্ধতি নিয়ে মতবিরোধ হওয়ায় তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করে সমাজতন্ত্রী দলে যোগ দেন (১৯৪৮)।
সতীনাথ নানা ভাষায় সুপণ্ডিত ছিলেন। ১৯৪৬ সালে প্রকাশিত ‘জাগরী’ উপন্যাসের মাধ্যমে তিনি প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন। রাজনৈতিক উপন্যাস হিসেবে বাংলা সাহিত্যে এর একটি বিশেষ স্থান আছে। ১৯৪৯-৫০ সালে প্যারিস ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি রচনা করেন ‘সত্যি ভ্রমণ কাহিনী’। অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে চিত্রগুপ্তের ফাইল, ঢোঁড়াই চরিত মানস, অচিন রাগিণী, অপরিচিতা, সংকট উল্লেখযোগ্য। বিহারের জনজীবনের ছবি তাঁর রচনায় অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে অঙ্কিত হয়েছে। জাগরী উপন্যাসের জন্য তিনি প্রথম ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’ লাভ করেন। ১৯৬৫ সালের ৩০ মার্চ তাঁর মৃত্যু হয়।
বাংলা কথাসাহিত্যের কয়েকজন লেখক আছেন, যারা সাহিত্য সমালোচকদের কাছে খুব প্রশংসা পেয়ে থাকেন তাঁদের রচনার শিল্পিত বৈশিষ্ট্যের জন্য, কিন্তু পাঠকসমাজে তেমন জনপ্রিয় নন। এই তালিকায় ওপরের দিকেই থাকবেন সতীনাথ ভাদুড়ী। তাঁর অন্তত দুটি উপন্যাসের নাম শিক্ষিত বাঙালির বেশিরভাগ জানেন, জাগরী আর ঢোঁড়াই চরিত মানস। যদিও তাঁর অন্যান্য কিছু উপন্যাস নিয়ে চর্চা সমালোচক মহলেও এমনকী খুব বেশি নয়।সতীনাথ সম্পর্কে দুটি উল্লেখযোগ্য জীবনী গ্রন্থের কথা আমাদের জানা আছে। একটি সাহিত্য একাডেমির ‘মেকার্স অব ইন্ডিয়ান লিটারেচর’ গ্রন্থমালার স্বস্তি মণ্ডল লিখিত জীবনী, আর একটি পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমীর জীবনী গ্রন্থমালার সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখিত জীবনী।
সূত্র: বাংলাপিডিয়া
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/28/2020