জন্ম: ১৬ মে, ১৯১৬, মৃত্যু: ১৬ এপ্রিল, ১৯৮৭। একাত্তর বছরের জীবন, তার অর্ধেকের বেশি কেটেছে বাংলা বিনোদন জগতে, মুখ্যত অভিনেতা হিসেবে। এ ছাড়া চিত্রনাট্য, পরিচালনা, প্রযোজনা ইত্যাদি অন্যান্য কাজও করেছেন।
ছবিতে যোগ দেওয়ার আগে বিকাশবাবু রেডিয়োতে কাজ করতেন, নাটক করা ও করানোর অভ্যাস ছিল। 'উদয়ের পথে' সিনেমার কাহিনিকার জ্যোতির্ময় রায়ের দাক্ষিণ্যে বিকাশবাবুর চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ ১৯৪৭ সালে, ছবির নাম অভিযাত্রী, পরিচালনা করেছিলেন হেমেন গুপ্ত। হেমেন গুপ্তর সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে বিকাশবাবু পরে ছবি করেছেন 'ভুলি নাই', এবং তারও পরে ''৪২'। অনেকের মতে ওই ছবিতেই বিকাশবাবুর শ্রেষ্ঠ অভিনয়। তা ছাড়া এই ছবি দু’টিতেই হেমেনবাবুর সহকারী পরিচালক হিসেবে বিকাশবাবু ছবি করার কলাকৌশল শিখলেন এবং একই রকম চিন্তাধারার কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রীকে ছবিতে নামালেন,যথা মঞ্জু দে।
সাঁইত্রিশ বছরে বিকাশ রায় প্রায় তিনশোর কাছাকাছি ছবি করেছেন। হেমেন গুপ্ত, জ্যোতির্ময় রায়, রাধামোহন ভট্টাচার্য আদি পথিকৃৎদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রকে নিছক পৌরাণিক বা স্বাদহীন সামাজিক ছবির মামুলিত্ব থেকে মুক্তি দেওয়া, নতুন পথ দেখানো, নতুন লোকদের আনার ব্যাপারে বিকাশবাবুর বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
শুধু অভিনয়েই আটকে থাকতে চাননি বিকাশ রায়। প্রথমে কয়েক জন সহকর্মী মিলে ছবি করেন, নাম শুভযাত্রা, মোটামুটি ভালোই চলে ছিল। কিছু পরে নিজের কোম্পানি করে বিকাশ রায় প্রোডাকশন্স ব্যানারে বেশ কয়েকটি ছবি করেন।
উনিশশো বাহাত্তরে স্টেজে অভিনয় করতে আরম্ভ করেছিলেন। বারো বছর স্টেজে কাজ করেছেন। অবসর নিলেন উনিশশো চুরাশিতে, ফিল্ম বা থিয়েটার লাইনে এর উদাহরণ বিরল।
১৯৫০ সালে সিগনেট প্রেস থেকে একটি পত্রিকা বেরোয়, নাম 'চলচ্চিত্র'। সম্পাদকমণ্ডলীতে তখনকার উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্ক সমাবেশ। সেখানে তাঁরা তখনকার কিছু নতুন, কিছু পুরনো অভিনেতা-অভিনেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত্কারের কথা লেখেন। বিকাশ রায় সম্বন্ধে সেখানে লেখা হয়েছিল :
'বিকাশবাবু যে জাতের, যে রুচির, যে মহলের লোক আজকের বাংলা চিত্র জগতে তাঁদের সংখ্যা বেশী নয়। আমাদের নিজেদের দিশি ছবির বিশিষ্ট ভাষা গড়তে পারব, সগৌরবে তুলে ধরতে পারবো পৃথিবীর সামনে। এবিষয়ে নতুন পথের সন্ধান যাঁরা দিতে পারবেন, আমরা আশা করি বিকাশ রায় তাঁদের মধ্যে একজন।'
সূত্র: abasar.net
সর্বশেষ সংশোধন করা : 12/28/2019