আজ যে নাটক আমরা দেখি, এটি শিশির ভাদুড়ী না থাকলে হত না। তাঁর আগে বাংলা নাটকে গিরিশ ঘোষ, দানীবাবুর মতো অভিনেতা ছিলেন। কিন্তু শিশির ভাদুড়ী ইংরেজির ডাকসাইটে ছাত্র, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় থেকে প্রেমাঙ্কুর আতর্থী, সকলে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বিদ্যাসাগর কলেজে অধ্যাপনার চাকরি ছেড়ে পেশাদারি মঞ্চে আসছেন। এই জিনিস আগে কখনও হয়নি। এই শিক্ষিত মননই বদলে দিল সব কিছু। তাঁর আগে, বাংলা নাটকে সেট বা মঞ্চসজ্জা বলে কিছু ছিল না। পিছনে ছবি-আঁকা পর্দা ঝোলানো থাকত, অভিনেতা পার্ট আউড়ে যেতেন। শিশিরবাবুই নিয়ে এলেন ত্রিমাত্রিক সেট, আলোর যথাযথ ব্যবহার। তাঁর পরিচালনাতেই নেমেছিল রবীন্দ্রনাথের ‘শেষ রক্ষা’র মতো নাটক।
আমেরিকার মাটিতে প্রথম বাংলা নাটক, সেটিও শিশিরবাবুর অবদান। কোনও ঘরোয়া সংস্কৃতি সম্মেলন বা প্রবাসী সম্মেলন নয়, ১৯৩০ সালে নিউ ইয়র্কের ভ্যান্ডারবিল্ট থিয়েটারে নেমেছিল ‘সীতা’।
চেয়েছিলেন জাতীয় নাট্যশালা, যেখানে দেশের ভাল অভিনেতাদের নিয়ে নাটক করা যাবে। সেই আশা পূরণ না হওয়ায়, পদ্মশ্রী থেকে নাট্য অকাদেমির সভাপতিত্ব সবই প্রত্যাখ্যান করেন।
জন্ম হাওড়ার রামরাজাতলায়, ১৮৮৯ সালের ২ অক্টোবর। কলকাতার বঙ্গবাসী স্কুল থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে বিএ পড়েন স্কটিশ চার্চ কলেজে। এমএ পাশ করার পরে ইংরেজির অধ্যাপনা শুরু করেন। পিতার নাম হরিপদ ভাদুড়ী। পেশাদার নট হিসাবে মঞ্চে অবতরণ ১৯২১ সালের ১০ ডিসেম্বর। নাটক ‘আলমগির’। তিনি নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন।
আলমগির (১৯২১), রঘুবীর (১৯২২), চন্দ্রগুপ্ত (১৯২২), বসন্ত লীলা (১৯২৩), সীতা (১৯২৪), বিসর্জন (১৯২৬), পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস (১৯২৬), মুক্তার মুক্তি (১৯২৬), প্রফুল্ল (১৯২৭), ষোড়শী (১৯২৭), শেষ রক্ষা (১৯২৭), শাহজাহান (১৯২৭), সধবার একাদশী (১৯২৭), বলিদান (১৯২৮), বিল্বমঙ্গল (১৯২৮), বিবাহ বিভ্রাট (১৯২৯), বুদ্ধবেদ (১৯২৯), রমা (১৯২৯), প্রতাপাদিত্য (১৯৩০), বিষ্ণুপ্রিয়া (১৯৩২), বিরাজ বৌ (১৯৩৪), শ্যামা (১৯৩৫), যোগাযোগ (১৯৩৬), দেশবন্ধু (১৯৪২), মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৯৪৩), বিন্দুর ছেলে (১৯৪৪)।
আঁধারে আলো (১৯২২), মোহিনী বা একাদশী (১৯২২), কমলে কামিনী (১৯২৪), পল্লীসমাজ (১৯৩২),সীতা (১৯৩৩), চাণক্য (১৯৩৯), পোষ্যপুত্র (১৯৪৩)।
১৯৫৯-এর ৩০ জুন শিশির কুমার ভাদুড়ি পরলোক গমন করেন।
সূত্র: abnews24.com ও anandabazar.com
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/27/2020