আজও এই দেশে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি এবং বছরে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ মারা যান। নিরাময়যোগ্য পেটের অসুখে প্রতি বছর মৃত্যু ঘটে দশ লক্ষ শিশুর। ম্যালেরিয়ার কারণ আবিষ্কৃত হয়েছে ১০০ বছরেরও আগে। কিন্তু তাতে এখনও আমাদের দেশে প্রতি বছর দেড় কোটি মানুষ আক্রান্ত হন। মৃত্যু হয় পঁচিশ হাজারেরও বেশি। কুষ্ঠ রোগীর সংখ্যা ৪০ লক্ষ। এইচ আই ভি/এইডস-এ ভুগছেন প্রায় তিন কোটি মানুষ। আমাদের দেশে ৩৫ লক্ষ মানুষ অন্ধ – যার প্রধান কারণ হল সামান্য দামের ভিটামিন ‘এ’র অভাব বা সঠিক সময়ে ছানি কাটাতে না পারা। শিশু ও মহিলাদের মধ্যে ৫০% ভুগছেন অপুষ্টি এবং রক্তাল্পতায়। প্রায় সমস্ত সংক্রামক রোগে ভারতবর্ষ বিশ্বে প্রথম। সরকারি পরিসংখ্যানই বলে দেশে মাত্র ১০-১২% মানুষ নিয়মিত ভাবে এবং আরও ২০% মানুষ মাঝে মধ্যে রোগ হলে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্মত ওষুধ পান। বাকি ৭০% বোধহয় বেঁচে আছেন কবচ-তাবিচ, জড়ি-বুটি বা স্বপ্নাদ্য ওষুধের দয়ায়। বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কারের পিছনে আছে মানুষের প্রয়োজন। তার জীবনযাত্রাকে আরও সহজ ও সমৃদ্ধ করার তাগিদে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তো এ কথা আরও সত্য। তার জন্মই হয়েছিল অসুস্থ মানুষকে আরোগ্য করার জন্য। রোগযন্ত্রণা দূর করার জন্য। অন্ধজনে আলো, আর মৃতজনে প্রাণসঞ্চারের জন্য। আজ এক দিকে বহু বিজ্ঞানী, বহু চিকিৎসাবিদের অনলস পরিশ্রমে যেমন এই বিজ্ঞান বিপুল উন্নতি করেছে, অন্য দিকে সাধারণ মানুষ, আর্থিক ভাবে দুর্বল মানুষ সেই সব আবিষ্কারের সুফল থেকে চিরবঞ্চিত। তাদের দিন কাটছে বিজ্ঞান থেকে বহদূরে, প্রায় মধ্য যুগের অন্ধকারে।
এই অবস্থা নিশ্চয়ই কারওর কাছেই কাম্য নয়। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের আশীর্বাদ যদি সমস্ত ভারতবাসীই সমান ভাবে ভোগ করতে পারেন, তবেই তাকে সফল বলে ধরতে হবে। তবেই আমরা আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করতে পারব।
সূত্র : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংসদ ও দফতর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
সর্বশেষ সংশোধন করা : 8/24/2019