১৮৯৭ সালে রোনাল্ড রস কলকাতার পিজি হাসপাতালে বসে আবিষ্কার করলেন ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু প্লাসমোডিয়াম কী ভাবে মশার শরীরে থেকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে, তার সম্পূর্ণ জীবনচক্র। বহু দিন পর্যন্ত বিশ্বাস ছিল খারাপ হাওয়াই (mal = খারাপ, air = হাওয়া) ম্যালেরিয়া রোগের কারণ। রসই প্রথম বুঝেছিলেন ম্যালেরিয়া রোগের কারণ হল এক ধরনের পরজীবী, যার বৈজ্ঞানিক নাম প্লাসমোডিয়াম। পরে একটি অ্যানোফিলিস মশার পেটে প্লাসমোডিয়ামের অস্তিত্ব আবিষ্কার করে রস বুঝতে পারেন যে ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু প্লাসমোডিয়াম হলেও সেটা ছড়ায় অ্যানোফিলিস মশার মাধ্যমে। অ্যানোফিলিস মশা ম্যালেরিয়া রোগীকে কামড়ালে রোগীর রক্তে মিশে থাকা প্লাসমোডিয়াম মশার শরীরে প্রবেশ করে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং গ্যামেটোসাইটে পরিণত হয়ে মশার লালায় প্রবেশ করে। এই মশা এ বার কোনও সুস্থ মানুষকে কামড়ালে তার শরীরে প্লাসমোডিয়ামের গ্যামেটোসাইট ঢুকে তাকে ম্যালেরিয়া রোগাক্রান্ত করে। ভাবতে গর্ববোধ হয় যে রোলান্ড রস-এর এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের সূতিকাগার হল আমাদের এই শহর কলকাতা।
এরই মধ্যে ঘটে চলেছে আরও নানা অভূতপূর্ব আবিষ্কার। প্রায় রক্তপাতহীন এবং সংক্রমণ শুন্য অস্ত্রোপ্রচারের জনক জোসেফ লিস্টার মানুষকে নতুন আশার আলো দেখালেন। জোসেফ লিস্টার ছিলেন সার্জন। তিনি দেখতে পেলেন অপারেশনের পর ইনফেকশনে রোগীর মৃত্যুর হার অসম্ভব রকম বেশি। উনি জানতেন হাঙ্গেরিয়ান চিকিৎসক Ignaz Semmelweis ১৮৪০ সালে বলেছিলেন, যে সব চিকিৎসক হাতকে জীবাণু মুক্ত করে না তাদের দ্বারা ইনফেকশন এক রোগী থেকে আরেক রোগীতে সংক্রমিত হয়। সাথে সাথে তিনি পাস্তুরের কাজ সম্বন্ধে জানতেন। তবে তিনি আরও একটি জিনিস জানতেন যা দিয়ে তিনি একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি জানতেন ফেনল (কার্বক্সিলিক এসিড) জীবাণুনাশক। তিনি তাই অপারেশনের আগে সব কিছু তাপ ও ফেনল দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিতেন। আর মাঝে মাঝে অপারেশন থিয়েটারে ফেনল স্প্রে করতেন। এই পদ্ধতি গ্রহণ করার ফলে অপারেশনের পর রোগীর মৃত্যুর হার আশ্চর্যজনক ভাবে কমে গেল।
আগে শল্য চিকিৎসায় যন্ত্রণাহীন বা অবশ করার বিদ্যা জানা ছিল না। ফলে বহু রোগীর মৃত্যু হত। মার্কিন দন্ত চিকিৎসক উইলিয়াম টমাস গ্রিন মর্টন ইথার প্রয়োগ করে অজ্ঞান করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। শুরু হয় অজ্ঞান করার বিদ্যা ‘অ্যানাস্থেসিয়া’য় (Anaesthesia) নতুন অধ্যায়।
সূত্র : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংসদ ও দফতর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
সর্বশেষ সংশোধন করা : 10/16/2019