বর্তমান দুনিয়ায় সব চেয়ে প্রয়োজনীয় তিনটি বিষয় হল খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান। এই তিন বিষয়ের পাশাপাশি আরও অত্যন্ত দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে উপেক্ষা করলে চলে না। সে দু’টি বিষয় হল - শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। চিকিৎসার অন্যতম প্রাচীন শাখা হল আর্য়ুবেদ। প্রাচীন কালে ভারতবর্ষ ছিল আর্য়ুবেদ শাস্ত্রে অগ্রণী। ভিষগাচার্য চরক, সুশ্রূত, জীবক প্রভৃতিদের সময়ে আয়ুর্বেদ উন্নতির শিখরে উঠেছিল। কেবল ওষুধের ব্যবহারেই নয়, শল্যবিদ্যাতেও আর্য়ুবেদ চমকপ্রদ উন্নতি করেছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ থেকে ৪০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ছিল আয়ুর্বেদের স্বর্ণযুগ। শুধু ভারতবর্ষেই নয়, চিন, মিশর, মেসোপটেমিয়া এবং গ্রিসেও আর্য়ুবেদ চিকিৎসা পদ্ধতি উন্নতির শিখরে ওঠে। গ্রিসের হিপোক্রেটিসকে (খৃঃ পৃঃ ৪৬০ থেকে ৩৭০) বলা হয় চিকিৎসাবিজ্ঞানের আদিপুরুষ। বর্তমানের পাশ্চাত্যের আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান গ্রিস থেকেই এসেছে বলে মনে করা হয়।
আয়ুর্বেদ পণ্ডিতদের পরেই নাম করতে হয় আরবের অ্যালকেমিস্টদের। মধ্যযুগে অর্থাৎ ৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১০০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে আরবে অ্যালকেমিস্টদের সহায়তায় চিকিৎসাবিদ্যা বিকাশ লাভ করে।
এর পর আসা যাক আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রসঙ্গে। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্ম হল পঞ্চদশ শতাব্দীতে। ইউরোপে রেনেসাঁর সময় থেকেই আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্ম ও বিকাশ। প্যারাসেলাস (১৪৯৩-১৫৪১)-কে যুক্তিনির্ভর আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যার আদি পুরুষ বলে অভিহিত করা হয়। তিনি ছাড়াও ফ্র্যাকাসটোরিয়াস, ভাসেলিয়াস, পারে, সিডেনহ্যাম বা জন হান্টার চিকিৎসার ক্ষেত্রে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারকে অতিক্রম করে পর্যবেক্ষণ ও প্রমাণভিত্তিক যুক্তিনির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার ব্যবহারিক প্রয়োগ শুরু করেন।
এর পর আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান দ্রুত এগিয়ে চলে। সপ্তদশ শতাব্দীর গোড়ায় আসে এক অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। উইলিয়াম হার্ভে আবিষ্কার করেন রক্তসংবহনতন্ত্র। এর পর আবিষ্কার হল অনুবীক্ষণ যন্ত্র। সময়টা ছিল ১৬৭০ সাল। আন্তন ভন লিউয়েনহক আবিষ্কার করে ফেললেন সেই যন্ত্রটি, যা খুলে দিল খালি চোখে দেখা যায় না এমন উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের এক বিশাল সাম্রাজ্য। আবিষ্কৃত হল কোষ, কলা ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের হাল হকিকত। আধুনিক বিজ্ঞানের যাত্রা শুরু হল। সুপ্রশস্ত হল, সুগম হল আরও এগিয়ে চলার পথ।
সূত্র : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংসদ ও দফতর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020
বীজ পোঁতা হয়েছিল ২০০৬-এ। ক্রমশই বাড়ছে কাজের পরিধি।