পদার্থের সাধারণ তিনটি ভৌত দশার একটি দশায় অবস্থিত বস্তুরূপ। যার নির্দিষ্ট ভর ও আয়তন আছে, জায়গা দখল করে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে, কিন্তু নির্দিষ্ট আকার নাই, তাকে তরল পদার্থ বলা হয়।
তরল পদার্থের সমোচ্চশীলতা গুণ থাকায় এর উপস্থিতি স্পষ্ট হয়ে উঠে পাত্রের আকারের উপরে। একগ্লাস পানিকে যদি এক মাইল আয়তনের কোন সমতল পাত্রে রাখা যায়, তবে তার অস্তিত্বই টের পাওয়া যাবে না। কিন্তু একটি গ্লাসে রাখলে তার উপস্থিতি জানা যাবে। নির্দিষ্ট আকার নাই বলে, তরল পদার্থ পাত্রের আকার ধারণ করে দৃশ্যমান হয়। তরল পদার্থের আন্তঃ আণবিক আকর্ষণ কঠিন পদার্থ অপেক্ষা কম। ফলে তরলপদার্থের কণাগুলো নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে চলাফেরা করতে পারে। কঠিন পদার্থ অপেক্ষা তরল পদার্থের কণাগুলোর ভিতরে ফাঁকা জায়গা বেশি থাকে। এর ফলে সাধারণত কঠিন পদার্থকে তরলে পরিণত করলে, এর আয়তন বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে জল একটি ব্যতিক্রমধর্মী পদার্থ। বরফকে তরল পদার্থে পরিণত করলে আয়তন কমে যায়।
আবিষ্কার : ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দ
বিজ্ঞানী : পয়টর কাপিৎসা
হিলিয়াম প্রথম তরলায়িত করেন হাইকে কামেরলিং ওনেস। তিনি একটি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে এই বিচিত্র তরলটির কিছু অসাধারণ ধর্ম আছে।
রুশ বিজ্ঞানী পয়টর কাপিৎসা ছিলেন আর্নেস্ট রাদারফোর্ডের সহকারী হিসাবে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে; গবেষণার বিষয় - চৌম্বক ক্ষেত্র। কাপিৎসা কৌতূহলী হলেন স্বল্প-তাপমাত্রা পদার্থবিদ্যায় এবং বেশি পরিমাণে তরল হিলিয়াম প্রস্তুতের একটি নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করলেন। এর জন্য তাঁকে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়েছিল।
তিনি খানিকটা আচম্বিতে দেখতে পেলেন যখন তিনি তরল হিলিয়ামকে ২.১৭ কেলভিন (২৭০.৮৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, পরম শূন্য তাপের থেকে ঠিক ২.১৭ ডিগ্রি উপরে) তাপমাত্রায় ঠান্ডা করলেন। এই তাপমানে পরমাণুর কোনও তাপীয় শক্তি থাকে না এবং হিলিয়ামের তরল অবস্থান্তর-প্রাপ্তি (ফেজ ট্রান্সিশন) ঘটে যার প্রকৃতি হয় অদ্ভুত রকমের। তরল পদার্থের প্রবাহিত হওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রতিরোধ আসে সান্দ্রতা থেকে - খুব সামান্য হল জলের, সিরাপের অনেক বেশি, এবং অতি-ঠান্ডায় হিলিয়ামের সান্দ্রতা হল শূন্য, তাপ পরিবাহিতা অসীম। কতিপয় সহকর্মী সহ কাপিৎসা আবিষ্কার করলেন একটি অতি-তরল (সুপারফ্লুইড) পদার্থ। একটি সিল-করা পাত্রে রাখা অতি-তরল হিলিয়াম মাধ্যাকর্ষণের বিপরীতে প্রবাহিত হতে পারে এবং পাত্রের গাত্রে মাত্র এক পরমাণু পুরু হিলিয়ামের স্তর আবৃত করতে পারে।
অতি-তরল পদার্থগুলি ব্যবহৃত হয় কোয়ান্টাম দ্রাবক হিসাবে। আলোর গতিকে প্রতি সেকেন্ডে ১৭ মিটারে নামিয়ে আনাতেও এর ব্যবহার আছে।
সূত্র : বিংশ শতাব্দীর পদার্থবিদ্যা ও ব্যাক্তিত্ব : ডঃ শঙ্কর সেনগুপ্ত, বেস্টবুকস
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/4/2020