আবিষ্কার : ১৯০২ খ্রিস্টাব্দ
বিজ্ঞানী : ভ্যালেরিওস স্টাইস
(প্রায় দু’ হাজার বছর পুরনো ‘আন্টিকিথেরা মেকানিজম’-কে বলা হয় বিশ্বের সব থেকে পুরনো অ্যানালগ কম্পিউটার। কিন্তু এর কার্যপ্রণালী বার করতে আধুনিক উন্নতমানের কৃৎকৌশলের প্রয়োজন হয়েছিল।)
১৯০২ খ্রিস্টাব্দে গ্রিক প্রত্নতাত্ত্বিক ভ্যালেরিওস স্টাইস কিছু শিল্পকর্ম নিয়ে কাজ করছিলেন যা তিনি আন্তিকিথেরা দ্বীপপুঞ্জের কাছে ডুবে যাওয়া একটি রোমান মালবোঝাই জাহাজ থেকে আবিষ্কার করেছিলেন। এর মধ্যে স্টাইস দেখতে পেয়েছিলেন একটি বড় মরচে-ধরা ঢেউখেলানো গিয়ার-চক্রাবলি। তা ছাড়া আরও ৮১টি যন্ত্রাংশ পেয়েছিলেন, যার মধ্যে ছিল বড় বড় ২৭টি চক্রের দণ্ড। এগুলি যে যন্ত্রের অংশ বলে মনে হয়, তা ছিল ৩৩ সেমি উঁচু, ২৭ সেমি চওড়া এবং ৯ সেমি মোটা একটি কাঠের ফ্রেমে আরূঢ়। প্রথম বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান করে ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ ডেরেক পিয়ার্স প্রতিপন্ন করলেন বস্তুগুলির উৎস গ্রিস এবং সেগুলি জ্যোতির্বিদ্যা-বিষয়ক যন্ত্রের অংশ। পরবর্তীকালে (২০০৬ খ্রিস্টাব্দ) আরও অনুসন্ধান করে জানা গেল আন্টিকিথেরা যান্ত্রিক পদ্ধতির রহস্য । গ্রিক-ইংরাজ যুগ্ম বিজ্ঞানীদের দল আরও আধুনিক বিম্ব-প্রয়োগকৌশল (ইমেজ প্রসেসিং টেকনিক) যেমন, ত্রিমাত্রিক এক্স-রশ্মি, মাইক্রো-ফোকাস টোমোগ্রাফি, ব্যবহার করল বিভিন্ন যন্ত্রাংশের উপর; প্রকাশ পেল, যন্ত্রাংশগুলি আগে যা ভাবা গিয়েছিল তার চাইতেও অনেক জটিল। এর মধ্যে আছে গ্রিক রাশিচক্র (জোডিয়াক), মিশরের একটি ক্যালেন্ডার এবং পিছনের দিকে দু’টো ডায়াল, যা নির্ভুল সময় চান্দ্র-আবর্ত (লুনার সাইক্ল) ও গ্রহণগুলির, এমনকী চন্দ্রের আলোকী-অক্ষপথের জন্য যে গতি পরিবর্তন হয়, তা প্রতিপূরণ করার ক্ষমতা দেয়। তা ছাড়া প্রমাণ রয়েছে এই যন্ত্র গ্রহিক গতি (প্ল্যানেটারি মোশন) হিসাবে ধরতে সক্ষম। খ্রিস্টপূর্ব ১০০-১১০ বৎসরে নির্মিত এই যন্ত্র আগামী দশ হাজার বৎসরের যান্ত্রিক বিজ্ঞানকে হার মানিয়েছে।
আজ বিজ্ঞানের এত উন্নতির পরেও এই যন্ত্রের দিকে যখন আমরা ফিরে তাকাই, তা আমাদের বিস্মিত করে।
সূত্র : বিংশ শতাব্দীর পদার্থবিদ্যা ও ব্যাক্তিত্ব : ডঃ শঙ্কর সেনগুপ্ত, বেস্টবুকস
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019