আবিষ্কার : ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দ
বিজ্ঞানী : এডউইন হাবল
যখন এডউইন হাবল-কে ১৯১৯ সালে মাউন্ট উইলসন মানমন্দিরে (ওয়াশিংটনের কার্নেগি ইন্সটিটিউশনের মানমন্দিরের অংশ) নিযুক্ত করা হল এক জন জুনিয়র জ্যোতির্বিদ হিসাবে, তখনকার দিনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছিল নেবুলি নামে যে মেঘাচ্ছন্ন প্যাচগুলি দেখা যায়, তাদের প্রকৃতি কী? হাবল-এর সহকর্মীদের বেশির ভাগই ভাবতেন সেগুলি সবই ছায়াপথের অঙ্গ; কিন্তু হাবল এতটা নিঃসংশয় ছিলেন না। তিনি এই প্রশ্নটির সঠিক উত্তর বের করার জন্য সব থেকে ভালো ভালো চিত্র জোগাড় করলেন এবং দেখালেন যে কিছু রয়েছে ছায়াপথের বেশ বাইরে। অন্যান্য ছায়াপথ আবিষ্কার করে হাবল আমাদের জানা বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডকে ১০০-গুণ বড় দেখাতে সক্ষম হলেন। তিনি কিন্তু এখানেই থামেননি। ছায়াপথের মধ্যেকার দূরত্ব ও ছায়াপথের গতি পরিমাপ করে তিনি আবিষ্কার করলেন যে ব্রহ্মাণ্ড ক্রমবর্ধমান এবং আইনস্টাইন সহ সবাইকে অবাক করে দিলেন।
হাবল খুব ভাগ্যবান যে তিনি মাউন্ট উইলসনে এসেছিলেন ১০০-ইঞ্চি দূরবীক্ষণ বসানো শেষ হওয়ার পর। এক জন সতর্ক এবং পরিশ্রমী গবেষক হিসাবে হাবল নীহারিকার অনেক ছবি তুললেন। বস্তুত অনেক ছবির প্রয়োজন ছিল সময়ের সঙ্গে কী পরিবর্তন হচ্ছে তা জানতে। তিনি কিছু নোভা পরিদর্শন করলেন যার ফলে জানতে পারলেন একটি অনুজ্জ্বল তারা কী ভাবে নিকটবর্তী উজ্জ্বল তারার সংস্পর্শে এসে উজ্জ্বল হয়ে যায়। ৪ অক্টোবর, ১৯২৩ সালে তিনি যখন সদ্য তোলা আন্ড্রোমেডা ছায়াপথের একটি ফোটোগ্রাফের সঙ্গে আগের দিন তোলা ফোটো মেলাচ্ছিলেন, হাবল সনাক্ত করলেন একটি ‘সেফিদ’-- অস্থির নক্ষত্র, যে নক্ষত্রের দ্বারা ছায়াপথের দূরত্ব মাপা যায়। পরবর্তী কিছু মাসে হাবল নির্ণয় করলেন যে নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা পরিবর্তিত হয় ৩১.৪৫ দিনের আবর্তকালে, যার অর্থ হল নক্ষত্রটি সূর্যের থেকে ৭,০০০ গুণ উজ্জ্বল। বাহ্য উজ্জ্বলতার সঙ্গে প্রকৃত উজ্জ্বলতা তুলনা করে হাবল নির্ধারণ করলেন যে এটি ৯০০,০০০ আলোক-বত্সর দূরে।
যে হেতু, হারলো শেপলি পূর্বে পরিমাপ করেছিলেন যে ছায়াপথের দূরত্ব প্রায় ১০০,০০০ আলোক-বত্সর, এই নতুন অনুসন্ধানের ফল প্রমাণ করে যে আন্দ্রোমেডা ছায়াপথ অন্য ছায়াপথ থেকে অনেক দূরে। পরে গবেষকগণ নির্ণয় করেন যে দু’প্রকারের ‘সেফিদ ভ্যারিয়েবল’ নক্ষত্র আছে এবং হাবল তুলনা করছিলেন আন্দ্রোমেডার ভিতরের উজ্জ্বল সেফিদ-এর সঙ্গে আমাদের নিজস্ব ছায়াপথের অনুজ্জ্বল সেফিদ-এর। এর অর্থ আন্দ্রোমেডা প্রকৃতপক্ষে প্রায় ২ মিলিয়ন আলোক-বর্ষ দূরে। পরবর্তী দশকে অন্যান্য অনেক ছায়াপথের দূরত্ব পরিমাপ করা হয়েছে। আজ বিলিয়ন আকাশ-বর্ষের দূরত্বে ছায়াপথের সন্ধান মিলেছে।
কিন্তু হাবলের কাজ শেষ হয়নি। তিনি জানতেন যে পূর্বে জ্যোতির্বিদ ভেস্টো স্লিফার কিছু ছায়াপথের ‘ডপলার শিফট’ পরিমাপ করেছিলেন, এবং দেখেছিলেন যে কিছু আমাদের ছায়াপথের দিকে এগুচ্ছে, আবার কিছু প্রচণ্ড বেগে দূরে সরে যাচ্ছে। সহকর্মী মিল্টন হুমাসন-এর সঙ্গে মিলিত হয়ে হাবল যত্ন সহকারে আরও অনেক ছায়াপথের দূরত্ব ও ‘ডপলার শিফট’ পরিমাপ করলেন ।
১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে হাবল একটি গবেষণা-পত্র প্রকাশ করে দেখালেন যে, ব্রহ্মাণ্ড নিয়তই বেড়ে চলেছে।
সূত্র : বিংশ শতাব্দীর পদার্থবিদ্যা ও ব্যাক্তিত্ব : ডঃ শঙ্কর সেনগুপ্ত, বেস্টবুকস
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019