ঘটনা : ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দ
আবিষ্কারক : জন বার্ডিন, উইলিয়াম বি শোকলি এবং ওয়াল্টার এইচ ব্র্যাটেইন।
২০০৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর বেল গবেষণাগারকে একটি ফলক উপহার দিল আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটি - জন বার্ডিন (১৯০৮-১৯৯১),উইলিয়াম বি শোকলি (১৯১০-১৯৮৯) এবং ওয়াল্টার এইচ ব্র্যাটেইন (১৯০২-১৯৮৭), এই তিন জনের সম্মানার্থে, তাঁদের দ্বারা ট্র্যানজিস্টার আবিষ্কারের জন্য। এই আবিষ্কারকে বলা হয়েছে বিংশ শতাব্দীর সব থেকে মূল্যবান আবিষ্কার । অর্ধ-পরিবাহী পদার্থ থেকে বিকশিত হয়ে ট্র্যানজিস্টার হল প্রথম উদ্ভাবনা যা বৈদ্যুতিক সংকেতকে শুধু পরিবর্ধন করে না, তাকে ‘অন’ বা ‘অফ’ করে যার ফলে কারেন্ট প্রবাহিত বা রুদ্ধ করে। এটি আকারে ছোট, খুব সামান্য তাপ উত্পাদন করে এবং অত্যন্ত নির্ভরশীল, যার ফলে জটিল সারকিটকে ছোট আকার দেওয়া সম্ভব হয়।
অর্ধ-পরিবাহীর উপর চির-স্মরণীয় গবেষণার জন্য বার্ডিন, শোকলি এবং ব্র্যাটেইনকে ১৯৫৬ সালের পদার্থবিদ্যায় নোবেল প্রাইজ দেওয়া হয়।
ট্র্যানজিস্টার উত্পত্তির একটি মজার কারণ হিসাবে দেখানো হয় মার্কিনি জাহাজ সংস্থা এ টি অ্যান্ড টি-র বাজারি সমস্যা। সে সময়ে টেলিফোন-টেকনোলজি ছিল ইলেক্ট্রোনিক ভালভ ব্যবহার করে। ভালভ সাইজে বড়, বেশি কারেন্ট নেয় এবং গরম হয়। তা ছাড়া বেল ল্যবোরেটরির বিজ্ঞানীরা দেখলেন এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে টেলিফোন-যোগাযোগ ব্যবহার করে অতি-উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি এবং নির্বাত নল এ ক্ষেত্রে অক্ষম। তা ছাড়া, সাইজে বড় হওয়াতে বাজারি-সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বেল গবেষণাগারের বিজ্ঞানীরা সমবেত হলেন এবং সেখান থেকে বেরিয়ে এল অর্ধ-পরিবাহীর উপর গবেষণা।
রেডিওর প্রধানত দুটি অংশ থাকে। প্রথমটি হলো প্রেরক অংশ যেখান থেকে শব্দ ইত্যাদি পাঠানো হয়। কেউ গান গাইলে বা কথা বললে সেই শব্দকে এক বিশেষ প্রক্রিয়ার সাহায্যে বিদ্যুত্ চৌম্বিক তরঙ্গে পরিণত করে বাতাসে ছাড়িয়ে দেওয়া এই অংশের কাজ। এই কাজটি বিভিন্ন বেতার কেন্দ্র করে থাকে। দ্বিতীয় অংশে বাড়িতে এরিয়ালে এই তরঙ্গ ধরে তাকে গ্রাহকযন্ত্রের সাহায্যে শব্দে পরিণত করা হয়। আর এই শব্দই আমরা শুনে থাকি। এই গ্রাহকযন্ত্রের জন্য কোনো প্রকার বৈদ্যুতিক শক্তির প্রয়োজন হয় না। এই ট্র্যানজিস্টার রেডিও সার্কিটটি ট্র্যানজিস্টারের সবচেয়ে সহজতম সার্কিট। এই সার্কিটে একটিমাত্র কয়েল ব্যবহার করা হয়েছে এবং সেটি বাজারে প্রচলিত যেকোনো স্ট্যান্ডার্ড মিডিয়াম ওয়েভ কয়েল। ভেরিয়েবল কেপাসিটরটি ০.০০০৫ Mfd এবং অপর কেপাসিটরটি ০.০০২ Mfd-এর। এই সেটটিতে আর্থ ও এরিয়াল প্রয়োজন। ট্র্যানজিস্টারে কালেকটার, বেস ও অ্যামিটার এই নামবিশিষ্ট তিনটি তার থাকে। যে তারটির নিকটে ট্র্যানজিস্টারের গায়ে লাল ফুটা অথবা ত্রিভুজের মতো চিহ্ন দেওয়া থাকে সেই তারটির নাম কালেকটার, মধ্যের তারটির নাম বেস এবং শেষেরটি অ্যামিটার।
সূত্র : বিংশ শতাব্দীর পদার্থবিদ্যা ও ব্যাক্তিত্ব : ডঃ শঙ্কর সেনগুপ্ত, বেস্টবুকস
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/12/2020