ঘটনা : ১৯০২ খ্রিস্টাব্দ
বিজ্ঞানী : আর্নেস্ট রাদারফোর্ড ও ফ্রেডরিক সডি
মানুষের ইতিহাসে বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান একটি বৈপ্লবিক অধ্যায়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এতো নাটকীয় অগ্রগতি আগেকার কোনও শতাব্দীগুলিতে দেখা যায়নি। কিছু কিছু আবিষ্কার (discovery) ও উদ্ভাবন (invention) এবং কিছু কিছু ঘটনা এই শতাব্দীতেই মানুষের জীবনে গভীর রেখাপাত করেছে ; অসংখ্যভাবে বিশ্বের সমস্ত দেশের মানুষ ও জীবের জীবনযাত্রায় ছাপ ফেলেছে।
১৯০১ খ্রিস্টাব্দে রাদারফোর্ড ও তাঁর সহকর্মী সডি থোরিয়াম মৌলের তেজস্ক্রিয়-ধর্ম নিয়ে গবেষণা করছিলেন কানাডার মন্ট্রিয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে। থোরিয়াম যে তেজস্ক্রিয় এটা জানা ছিল। কিন্তু সেই তেজস্ক্রিয়তা কতটা গভীর সেটা জানাই ছিল গবেষণার মূল উদ্দেশ্য। একটি পরীক্ষায় সডি থোরিয়াম-নাইট্রেটকে দু’টো ভাগে এমন ভাবে বিভক্ত করলেন যে, ( ক) একটি ভাগ তেজস্ক্রিয় নয় এবং (খ) অন্যটি বেশি মাত্রায় তেজস্ক্রিয়। তিনি দ্বিতীয় ভাগটির নাম দিলেন থোরিয়াম এক্স। গবেষণায় এই সাফল্যে উল্লসিত হয়ে রাদারফোর্ড ও সডি তিন সপ্তাহের ছুটিতে গেলেন।
প্রত্যাবর্তনের পর তাঁরা সবিস্ময়ে দেখলেন, (খ)-নং নমুনায় থোরিয়াম এক্স তেজক্রিয়তা সম্পূর্ণ ভাবে হারিয়েছে, কিন্তু অন্য (ক) নমুনাটি -থোরিয়াম পূর্বের তেজস্ক্রিয়ক্ষমতা ফিরে পেয়েছে। দুই বিজ্ঞানী বিশদ ভাবে উপলভ্য বিষয়টি অনুসন্ধান করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে, প্রথম নমুনা (ক)-এর থোরিয়াম পরমাণু বিভক্ত হয়ে রূপান্তরিত হচ্ছে থোরিয়াম এক্স-এ (যা আমরা এখন জানি, রেডিয়াম) ও থোরিয়ামে। একই ভাবে থোরিয়াম এক্স পরমাণু বিভক্ত হয়েছে অন্যান্য মৌলতে। রাদারফোর্ড ও সডি এই রূপান্তর প্রক্রিয়ার নাম দিলেন ‘ট্রান্সমিউটেশন’-- যে নামটি তাঁরা চয়ন করেছিলেন কিমিয়া (অ্যালকেমি) থেকে।
১৯০২ খ্রিস্টাব্দে তাঁদের এই অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ করলেন একটি প্রবন্ধে – ‘দ্য কজ অ্যান্ড নেচার অফ রেডিওঅ্যাক্টিভিটি’। এই প্রথম ‘ট্রান্সমিউটেশন’-এর বিশেষ বিবরণ সহ, আর তার সঙ্গে আলোকপাত করলেন তেজস্ত্রিয় ক্ষয়ের (রেডিওঅ্যাকটিভ ডিকে) বিষয়টির উপর ।
সূত্র : বিংশ শতাব্দীর পদার্থবিদ্যা ও ব্যাক্তিত্ব : ডঃ শঙ্কর সেনগুপ্ত, বেস্টবুকস
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/17/2020