নিউট্রন হলো একটি বিদ্যুৎ নিরপেক্ষ হ্যাড্রন যা পারমাণবিক নিউক্লিয়াস'র মধ্যে স্থিতিশীল হলেও পারমাণবিক নিউক্লিয়াস'র বাইরে এর গড়ায়ু ১২ মিনিট। এর নিশ্চল ভর হলো ১.৬৭৪৯২ X ১০-২৭ কিলোগ্রাম, যা প্রোটনের(১.৬৭২৬১৪ X ১০-২৭ কিলোগ্রাম) থেকে সামান্য বেশি এবং একটি ইলেক্ট্রনের ভরের ১৮৩৯ গুণ ।কোন পরমাণুতে ধনাত্মক আধান যুক্ত প্রোটন ও ঋণাত্মক আধান যুক্ত ইলেকট্রনের মোট ভরের থেকেও তার পারমাণবিক ভর বেশি হয়।পরমাণুর এ সামগ্রিক ভরের হিসাব মেলানোর জন্যই বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড সর্বপ্রথম পরমাণুর নিউক্লিয়াসে আধান নিরপেক্ষ কণার উপস্থিতি সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী করেন। পরবর্তীতে বিজ্ঞানী জেমস্ চ্যাডউইক(১৮৯১-১৯৭৪) ১৯৩২ সালে সর্বপ্রথম পরমাণুর নিউক্লিয়াসে চার্জ নিরপেক্ষ নিউট্রনের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন এবং প্রমাণ করেন যে সাধারণ হাইড্রোজেন (হাইড্রোজেন-১) ছাড়া আর সব পারমাণবিক নিউক্লিয়াসে নিউট্রন বিদ্যমান। পারমাণবিক ভর এককে এর ভর প্রায় ১⋅০০৮৬৬৫পারমাণবিক ভর একক। নিউট্রন পরমাণুর নিউক্লিয়াসে অবস্থান করে। নিউক্লিয়াসে ধনাত্মক আধান যুক্ত প্রোটনের পারস্পারিক বিকর্ষণের কারণে পরমাণু যাতে অস্থিতিশীল না হয়ে পড়ে সে জন্য নিউট্রন এদের পারস্পারিক বিকর্ষণ কমিয়ে দেয়। কিছু শর্তাধীনে চার্জ নিরপেক্ষ নিউট্রন ভেঙে গিয়ে একটি প্রোটন, একটি ইলেকট্রন ও একটি এন্টিনিউট্রিনো উৎপন্ন করে। ধারণা করা হয় তেজষ্ক্রিয় মৌলের বিভাজনের ফলে যে ক্যাথোড রশ্মি তথা ইলেক্ট্রনের প্রবাহ উৎপন্ন হয় তার উৎপত্তি এভাবে ঘটে।
আবিষ্কার : ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দ
বিজ্ঞানী : ভিলহেলম হাইনরিশ ভালটার বাডে, ফ্রিৎস সুইকি
নিস্তড়িৎ কণা নিউট্রন আবিষ্কারের এক বছরের মধ্যেই দু’জন নভোপদার্থবিদ ভিলহেলম হাইনরিশ ভালটার বাডে এবং ফ্রিৎস সুইকি নিউট্রন-নক্ষত্রের মূল নীতি প্রকাশ করলেন। সুপারনোভার উপরে গবেষণা করার সময় তাঁরা এই ধারণা প্রকাশ করেন।
তাঁরা প্রস্তাব করলেন যে নক্ষত্রগুলি যখন পুরনো হয়, তারা ভিতর থেকে বাইরে হঠাৎ সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে যায়। নক্ষত্রের নিউক্লিয়াসে পরমাণুগুলি যখন অস্থিত হয়ে যায়, তাদের সর্ববহিঃস্থ কণাগুলি - ঋণাত্মক আধানযুক্ত ইলেকট্রনগুলি পরমাণুর নিউক্লিয়াসে ধংসপ্রাপ্ত হয় এবং ফলস্বরূপ ধনাত্মক প্রোটনগুলি নিউট্রনে রূপান্তরিত হয়। আধানহীন অবস্থায় কণাগুলি দৃঢ় ভাবে পরষ্পরে আবদ্ধ হয়ে অচিন্ত্যনীয় ভাবে নিবিড় গোলকে রূপান্তরিত হয়, যার নাম তাঁরা দিলেন নিউট্রন-নক্ষত্র। গোলকগুলি রূপান্তরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষিপ্রতার সঙ্গে প্রবল মহাকর্ষীয় টানসহ ঘুরপাক খেতে থাকে। নক্ষত্রের বাইরের স্তর যেটা বিনষ্ট হয় না তা হঠাৎ ফেটে প্রদর্শনীয় ভাবে বিকশিত হয় যার নাম সুপারনোভা। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে ভিক্টর হেস প্রস্তাবিত নভোরশ্মি বিষয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বাডে এবং সুইকি উপরে বর্ণিত আবিষ্কার করেন। তাঁরা চিন্তা করলেন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পৌঁছয় এমন অনেকগুলি নভোরশ্মি আমাদের ছায়াপথে নির্মিত হয় না, সেগুলি নির্মিত হয় সুপারনোভায় নিউট্রন-নক্ষত্র সহ। ১৯৩৩ সালে নিউট্রন-নক্ষত্র ও সুপারনোভা অনেকের কাছেই অবাস্তব মনে হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে বাডে ও সুইকি-র আবিষ্কার নভোপদার্থবিদ্যায় একটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কারের মধ্যে গণ্য হয়।
সূত্র : বিংশ শতাব্দীর পদার্থবিদ্যা ও ব্যাক্তিত্ব : ডঃ শঙ্কর সেনগুপ্ত, বেস্টবুকস
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019