আবিষ্কার : ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ
বিজ্ঞানী : রিচার্ড ডিক্সন ওল্ডহ্যাম
পৃথিবী নামক গ্রহের অভ্যন্তর ভাগ বিজ্ঞানীদের কাছে এখনো রহস্যের আধার হয়ে আছে। লোহার পূর্ণ এই অভ্যন্তর ভাগের তাপমাত্রা ৭ হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইট হওয়া সত্ত্বেও ভূ-পৃষ্ঠের প্রবল চাপে তা কঠিন আকার ধারণ করেছে। এ অঞ্চল সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা নিত্য-নতুন তথ্য আবিষ্কার করে চলেছেন। ভূ-পৃষ্ঠের কম্বল নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে গিয়ে তারা বিস্ময়ে লক্ষ্য করেন যে, ভূ-অভ্যন্তর ভাগ এমন আচরণ করছে যা কেবল স্ফটিকের (ক্রিস্টাল) ধর্মের সাথে মিল খায়।
ওজনের দিক দিয়ে পৃথিবীর বেশির ভাগ লৌহ। তবে ভূ-পৃষ্ঠে প্রাপ্ত অন্যান্য ধাতুর তুলনায় এর পরিমাণ কম। ভূ-পৃষ্ঠে অক্সিজেন ও সিলিকনের মত হালকা উপাদান বেশি। কোটি কোটি বছর পূর্বে পৃথিবীর উপরিভাগ যখন ছিল তরল, সে সময় লোহা পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগে গিয়ে আশ্রয় নেয়। অপরদিকে হালকা ধাতব ও অন্যান্য খনিজ দ্রব্য ভূ-পৃষ্ঠে চলে আসে। ভূ-অভ্যন্তর ভাগের কঠিন লৌহের অংশ দেড় হাজার মাইল প্রশস্ত। যা পৃথিবীর মোট আয়তনের এক শতাংশেরও কম। এই অংশের গঠন সম্পর্কে সম্প্রতি কতিপয় বিজ্ঞানী মতবাদ দিয়েছেন। তাদের মতে এটা একটা বিশালাকার কঠিন স্ফটিকের মাধ্যমে হতে পারে।
তবে এ বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজটি যিনি করেছিলেন, তার জন্ম হয়েছিল ভারতে, ১৮৫৮ সালে। বিশিষ্ট ভূবিজ্ঞানী রিচার্ড ডিক্সন ওল্ডহ্যাম একুশ বছর বয়সে জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়াতে কাজে যোগ দেন। বিশেষ ভাবে পরিচিত তাঁর দু’টি গবেষণাপত্র হল - ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে আসাম ভূমিকম্প, যা বিশাল এলাকা জুড়ে অনুভূত হয়েছিল এবং পৃথিবীর অভ্যন্তর বিষয়ক গবেষণা ।
ওল্ডহ্যাম পৃথিবীর অন্তঃস্থল (কোর) গঠন বিষয়ক আবিষ্কারটি করেন ১৯০৬ সালে। তিনি সারা পৃথিবীর ভূকম্পীয় ঢেউগুলির পথের বিস্তারণ পরীক্ষা করে দেখলেন যে, কিছু ঢেউ প্রতিসরিত হয় এবং কিছুর গতি পরিবর্তিত হয় যখন পৃথিবীর অন্তঃস্থলের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়, আবার কিছু ঢেউয়ে তা হয় না । তা ছাড়া ভূকম্পীয় ঢেউগুলির গতি কিছুটা পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় যখন তারা ভূগোলকের অভ্যন্তর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সে সময়ে কিছু কিছু গভীরতায় তারা হঠাৎ মন্থর হয়ে যায়। তিনি প্রস্তাব করেন যে ঢেউগুলি নিশ্চয় বিভিন্ন পদার্থের সম্মুখীন হচ্ছে। এই সব প্রমাণ পর্যালোচনা করে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে পৃথিবীর একটি অন্তঃস্থল আছে। ওল্ডহ্যাম এই অন্তঃস্থলের পরিমাপও নিরূপণ করেন পৃথিবীব্যাপী হাজারখানেক ভূকম্পনের বিভিন্ন গভীরতায় গতি পরিবর্তনের হিসাব থেকে ।
সূত্র : বিংশ শতাব্দীর পদার্থবিদ্যা ও ব্যাক্তিত্ব : ডঃ শঙ্কর সেনগুপ্ত, বেস্টবুকস
সর্বশেষ সংশোধন করা : 12/6/2019