আবিষ্কার : ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দ
বিজ্ঞানী : সত্যেন্দ্রনাথ বোস
সত্যেন্দ্রনাথ বসু (১ জানুয়ারি ১৮৯৪ – ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী। তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র ছিল গাণিতিক পদার্থবিদ্যা। সত্যেন্দ্রনাথ বসু আলবার্ট আইনস্টাইনের সঙ্গে যৌথভাবে বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান প্রদান করেন, যা পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বলে বিবেচিত হয়।
ছাত্রজীবনে অত্যন্ত মেধাবী সত্যেন্দ্রনাথ কর্মজীবনে সম্পৃক্ত ছিলেন বৃহত্তর বাংলার তিন শ্রেষ্ঠ শিক্ষায়তন কলকাতা, ঢাকা ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে। সান্নিধ্য পেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, মাদাম কুরী প্রমুখ মণীষীর। আবার অনুশীলন সমিতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক ও স্বাধীনতা আন্দোলনের সশস্ত্র বিপ্লবীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগও রাখতেন দেশব্রতী সত্যেন্দ্রনাথ। কলকাতায় জাত সত্যেন্দ্রনাথ শুধুমাত্র বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার প্রবল সমর্থকই ছিলেন না, সারা জীবন ধরে তিনি বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার ধারাটিকেও পুষ্ট করে গেছেন। এই প্রসঙ্গে তাঁর অমর উক্তি, “যাঁরা বলেন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান হয় না, তাঁরা হয় বাংলা জানেন না, নয় বিজ্ঞান বোঝেন না।”
আলোর দ্বৈত চরিত্রের স্বরূপ বিষয়ে কিছু অস্বাচ্ছ্যন্দ ছিল যা দূর হয়েছিল বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বোসের একটি প্রবন্ধ দ্বারা (১৯২৪ সালের জুন মাস) – প্লাঙ্কস ল’ অ্যান্ড দ্য হাইপোথেসিস অফ লাইট কোয়ান্টা’। প্রবন্ধটি ছাপা হয়েছিল জার্মানির ‘ৎসাইটশ্রিফট ফুর ফিজিক’ জার্নালে (অনুবাদক আইনস্টাইন নিজে) ঐ বছর জুলাই মাসে। বোস বিকিরণকে এমন এক গ্যাসের মতন ভাবলেন যা ফোটন দিয়ে পূর্ণ। পারিসাংখ্যিক বলবিদ্যার সাহায্যে কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণ এক নূতন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ব্যাখ্যা হল। প্রচলিত পারিসাংখ্যিক বলবিদ্যায় বোলৎজমানের চিন্তা অনুসারে প্রত্যেক অণুর একটি নিজস্ব পরিচয় আছে; প্রত্যেক অণুকে আলাদা ভাবে চিহ্ণিত করতে পারা যায়। বিপরীতক্রমে বোসের চিন্তায় আলোককণারা সবাই এক ও অভিন্ন। বোলৎজমানের চিন্তায় ‘বি’ অণুর জায়গায় ‘এ’ অণুকে বসালে সম্পূর্ণ নূতন বিন্যাস পাওয়া যাবে; যাকে আলাদা ভাবে গণনা করতে হবে। বোসের চিন্তায় দু’টি একই ধরনের কণা; স্থানান্তর করলে নূতন সজ্জা পাওয়া যাবে না। এর ফল হল কৃষ্ণবস্তু বিকিরণের ফর্মুলার নতুন প্রমাণ।
আইনস্টাইন বুঝতে পেরেছিলেন বোস-এর পরিসাংখ্যিক পদ্ধতি সাধারণ পরমাণুদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যাবে। তিনি ১৯২৪ সালেই বোস-এর কাজের উপর ভিত্তি করে একটি প্রবন্ধ রচনা করেন; জন্ম নিল নূতন এক সাংখ্যায়ন, ‘বোস-আইনস্টাইন সাংখ্যায়ন’।
সূত্র : বিংশ শতাব্দীর পদার্থবিদ্যা ও ব্যাক্তিত্ব : ডঃ শঙ্কর সেনগুপ্ত, বেস্টবুকস
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/13/2019