আবিষ্কার : ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ
বিজ্ঞানী : কার্ল জানস্কি
বেতার-জ্যোতির্বিদ্যা (রেডিও অ্যাস্ট্রোনমি) হল নক্ষত্র, ছায়াপথ ইত্যাদি অন্তরীক্ষ-বস্তুর থেকে নির্গত রেডিও-কম্পাঙ্কগুলির অধ্যয়ন। রেডিও-তরঙ্গ উত্পন্ন হয় স্বাভাবিক ভাবে বিদ্যুৎ ও ভূমণ্ডলের বিভিন্ন বস্তুর দ্বারা অথবা মনুষ্যকৃত যোগাযোগ ও সম্প্রচার কৃত্কৌশল দ্বারা।
পৃথিবীর মধ্যে চতুর্দিকে ছড়িয়ে রাখা হয়েছে অনেক রেডিও টেলিস্কোপ, যেগুলি সাহায্য করছে নূতন নক্ষত্র (এমনকী যেগুলি থেকে আলো নির্গত হয় না) ও ছায়াপথ আবিষ্কারে। জ্যোতির্বিদ্যার এই নতুন দিক দর্শন করিয়েছেন কার্ল জানস্কি, যিনি আখ্যাত হয়েছেন ‘বেতার-জ্যোতির্বিদ্যার জনক’ হিসাবে।
ঘটনার শুরু হয় অনেকটা এভাবে…
১৯২৭ সালে ইউনিভার্সিটি অব উইস্কন্সিন ম্যাডিসন থেকে স্নাতক শেষ করে ১৯২৮ সালের দিকে নিউ জার্সির বেল টেলিফোন পরিক্ষাগারে যোগ দেন কার্ল জানস্কি। বেল পরিক্ষাগারে তখন শর্ট ওয়েভ (১০-২০ মিটার বেতার তরঙ্গ) ব্যবহার করে বায়ুমণ্ডলীয় এবং আয়নোস্ফেরিক বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা চলছিল, আর বেতার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে জানস্কিকে বেতার সম্প্রচারে বিঘ্ন ঘটাতে পারে এমনসব স্থির উৎস তদন্তের কাজ দেয়া হয়। ১৯৩০ সালের দিকে তিনি ট্রান্স-আটলান্টিক বেতার যোগাযোগে বিঘ্নকারী তিন ধরনের প্রতিবন্ধক শনাক্ত করেন। স্থানীয় ও দূরবর্তী বজ্রঝড়ের কারণে সৃষ্ট বেতার প্রতিবন্ধক ছাড়াও অন্য একটি উৎস ধরা পড়ে তাঁর বেতার টেলিস্কোপে। প্রতি ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিটে পুনরাবৃত্তি করতে থাকা এই ক্ষীণ শব্দ নিয়ে কৌতূহল জাগে জানস্কির। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ জানস্কি প্রথম দেখতে পেলেন অন্তরীক্ষ-বস্তু (প্রাথমিক ভাবে ছায়াপথ) থেকে নির্গত বেতার-তরঙ্গ। পরবর্তী পর্যবেক্ষণগুলি আরও কয়েকটি বিভিন্ন উত্সকে শনাক্ত করল। এগুলিতে নক্ষত্র, ছায়াপথ ছাড়া আরও কিছু বস্তু পাওয়া গেল যেমন, বেতার-তারকাপুঞ্জ (রেডিও গ্যালাক্সিস), কোয়াসার, পালসার এবং মেসার। মহাজাগতিক মাইক্রোওয়েভ স্বাভাবিক বিকিরণের (কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড র্যাডিয়েশন) আবিষ্কার (যা পরবর্তীকালে বিগ ব্যাং-এর অকাট্য প্রমাণ দিয়েছি ) বেতার-জ্যোতির্বিদ্যা দ্বারা সম্পন্ন হয়েছিল।
কার্ল জানস্কির আবিষ্কার জন্ম দিল মহাকাশ বিজ্ঞানের এক নতুন শাখার; বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞান হল মহাকাশ বিজ্ঞানের সাথে বেতার ইঞ্জিনিয়ারিং এর সেই অপূর্ব সমন্বয় যা আজও দিয়ে যাচ্ছে জ্যোতির্বিজ্ঞানের অনেক জটিল প্রশ্নের উত্তর।
কার্ল জানস্কির সম্মানে বেতার তরঙ্গের শক্তির এককের নামকরণ করা হয় জানস্কি।
সূত্র : বিংশ শতাব্দীর পদার্থবিদ্যা ও ব্যাক্তিত্ব : ডঃ শঙ্কর সেনগুপ্ত, বেস্টবুকস
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/12/2020