আবিষ্কার : ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ
বিজ্ঞানী : ফ্রেডরিক গাওল্যান্ড হপকিনস
ভিটামিন হলো খাদ্যের একটি অত্যাবশ্যকীয় জৈব রাসায়নিক উপাদান, যা শরীরের ভেতরে তৈরি হয় না এবং অবশ্যই খাবার থেকে গ্রহণ করতে হয়। আমাদের ধারণা, ভিটামিন শরীরে শক্তি জোগায়, ভিটামিন খেলে দুর্বলতা কমবে বা খারাপ স্বাস্থ্য ভালো হবে। আসলে ধারণাটা ঠিক নয়। ভিটামিন থেকে শরীরে সরাসরি কোনো শক্তি উৎপন্ন হয় না। তবে বিভিন্ন প্রকার খাদ্য, যেমন শর্করা, আমিষ ও স্নেহজাতীয় খাবারের বিপাক-প্রক্রিয়ায় ভিটামিন অংশ নেয়। ফলে দেহে কোনো একটি ভিটামিনের অভাব হলে সেই নির্দিষ্ট উপাদানের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। জৈব রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ভিটামিনকে সাধারণত জলে ও চর্বিতে দ্রবণীয় এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়। চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন হচ্ছে এ, ডি, ই, কে। জলে দ্রবণীয় ভিটামিন বি এবং সি।
ফ্রেডারিক গাওল্যান্ড হপকিনস (১৮৬১-১৯৪৭ খ্রি), ব্রিটিশ বায়োকেমিস্ট্রি-র জনক ১৯০০ সালের প্রথম দিকে খাদ্য বিষয়ে বেশ কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে সাফল্য লাভ করলেন। তিনি কিছু কচি ইঁদুরকে অতি সাবধানে প্রস্তুত সংশ্লেষিত খাদ্য দিলেন যার মধ্যে আছে শোধিত প্রোটিন, শ্বেতসার এবং স্নেহপদার্থ-সহ অজৈব লবণ ও জল-এর মিশ্রণ। ইঁদুরগুলির বৃদ্ধি তো হলই না, উপরন্তু তাদের ওজন গেল কমে। অথচ ঐ খাদ্যের সঙ্গে সামান্যতম গরুর দুধ মেশালে ফল হচ্ছে আশাতিরিক্ত ভালো। তিনি বিবেচনা করলেন গোদুগ্ধে নিশ্চয় কোনও উপাদান আছে যা দেহের সাধারণ বৃদ্ধি ও সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন। তিনি সন্দেহ করলেন, পুষ্টিগত-বিদ্যায় সাধারণ ভাবে যে সব উপকরণ ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তাদের মধ্যে এমন কিছু দ্রব্য আছে যা ইঁদুরের সাধারণ খাদ্যে নেই। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে এই সব দ্রব্যের তিনি নাম দিলেন ‘সহায়তাকারী খাদ্য-উপাদান’। অচিরেই এই উপাদানগুলির নামকরণ হল ভিটামিন।
১৯১২ খ্রিস্টাব্দে হপকিনস তাঁর জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাজ প্রকাশ করলেন । হপকিনসের পরীক্ষা ও সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে অচিরেই ‘পুষ্টি’ বিজ্ঞানসম্মত ভাবে বায়োকেমিস্ট্রি-র একটা বিশেষ অঙ্গ হিসাবে পরিগণিত হল।
সূত্র : বিংশ শতাব্দীর পদার্থবিদ্যা ও ব্যাক্তিত্ব : ডঃ শঙ্কর সেনগুপ্ত, বেস্টবুকস
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/8/2020