আবিষ্কার : ১৯০০ খ্রিস্টাব্দ
বিজ্ঞানী : খ্রিসচিয়ান বার্কল্যান্ড
‘উত্তরের আলো’ এবং ‘সুমেরুজ্যোতি’ (অরোরা বোরিয়ালিস) নাম দেওয়া হয়েছে একটি ঘটনাকে যা হাজার হাজার বত্সর ধরে ঘটে চলেছে পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র, কিন্তু চোখে দেখা যায় শুধুমাত্র পৃথিবীর অতি-উত্তর অংশে। উত্তরের আলো সত্যসত্যই একটা অতি আশ্চর্যজনক দৃশ্য তার অত্যুজ্জ্বল ও ঝলসানো পরিমণ্ডল নিয়ে যা ওই সকল স্থানের অধিবাসী এবং পর্যটকদের একই ভাবে বিমোহিত ও আশ্চর্য করে।
সাধারণ ভাবে বলতে গেলে, বায়ুমন্ডলের থার্মোস্ফিয়ারে থাকা অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন পরমাণুর সাথে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার থেকে আসা চার্জিত কণিকাসমূহের (প্রধা্নত ইলেক্ট্রন, কিছু ক্ষেত্রে প্রোটন) সংঘর্ষের ফলেই অরোরা তৈরী হয়। সংঘর্ষের কারণে পরমাণু বা অণুসমূহ কিছু শক্তি লাভ করে চার্জিত কণিকাসমূহের কাছ থেকে যা অভ্যন্তরীণ শক্তি হিসেবে সঞ্চিত হয়। এসব অভ্যন্তরীণ শক্তি যখন আলোকশক্তি হিসেবে বিকরিত হয়, তখনই মেরুজ্যোতি দেখা যায়।
এসব ইলেক্ট্রন সাধারণত পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র বরাবর পরিভ্রমণ করায় শুধুমাত্র মেরু অঞ্চলেই অরোরা দৃশ্যমান হয়।
উত্তর অক্ষাংশে অরোরা সুমেরুজ্যোতি বা সুমেরুপ্রভা নামে পরিচিত, এবং দক্ষিণ অক্ষাংশে একে বলা হয় কুমেরুপ্রভা।
১৯০০ খ্রিস্টাব্দে নরওয়ে-বাসী খ্রিসচিয়ান বার্কল্যান্ড একটি সূত্র প্রদান করেন -- যে আলো আকাশে দেখা যাচ্ছে তা গঠিত হয় সৌরকলঙ্ক (সানস্পট) থেকে নির্গত বিদ্যুত্গ্রস্ত কণা (চার্জড পার্টিকল) বিশ্বের আবহমণ্ডলের সংস্পর্শে এলে এবং পরে আকার ধারণ করে ভূচৌম্বকীয় শক্তি দ্বারা। তিনি একটি বায়ুশূন্য প্রকোষ্ঠে আহিত (চার্জড) ধাতুর গোলককে রেখে চুম্বকশক্তিসম্পন্ন করে দেখালেন সেটা থেকে বিচ্ছুরিত আলোকের রঙ বদল হচ্ছে ; যত চুম্বকশক্তি বাড়ানো যায়, বিচ্ছুরণ তত প্রবল হয়।
বার্কল্যান্ডের তত্ত্বকে প্রমাণ করতে গেলে পৃথিবী-পৃষ্ঠের ৮০ কিলোমিটার ঊর্ধ্বে আয়নমণ্ডলে যাওয়া দরকার যেটা সম্ভব হয়েছিল ১৯৭৪ সালে। ঐ বত্সর আলফ্রেড মুডা এবং জেমস আর্মস্ট্রং একটি চুম্বকীয় ম্যাপ নির্মাণ করেছিলেন যাকে বলা হয় ‘বার্কল্যান্ড কারেন্ট’ ম্যাপ।
সূত্র : বিংশ শতাব্দীর পদার্থবিদ্যা ও ব্যাক্তিত্ব : ডঃ শঙ্কর সেনগুপ্ত, বেস্টবুকস
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019