ছোটবেলায় স্কুলে প্রায়ই রচনা লিখতে হত ‘বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ’। সেই রচনা লিখতে গিয়ে পাতা ভরে লিখতাম বিজ্ঞান আমাদের কী কী দিয়েছে— সকালে ঘুম ভাঙা থেকে রাত্তিরে শুতে যাওয়া পর্যন্ত জীবনযাত্রার নানা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান আমাদের কী কী উপকরণ দিয়েছে, আর সেই সব উপকরণে বিজ্ঞানের প্রায়োগিক দিকগুলোকে আমরা কী ভাবে ব্যবহার করি। তখন বুঝিনি, বিজ্ঞান বলতে আমরা যা বোঝাচ্ছি, তা আসলে প্রযুক্তি। শুনলাম, এই বছরও মাধ্যমিক পরীক্ষায় এই রচনাই লিখতে বলা হয়েছে। সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে।
২৮ ফেব্রুয়ারি ছিল জাতীয় বিজ্ঞান দিবস। পদার্থবিজ্ঞানী সি ভি রমন এই দিনেই ‘রমন এফেক্ট’ আবিষ্কার করেন, যার জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার পান। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সঞ্চার নিগমের (এনসিএসটিসি) ঘোষণা অনুযায়ী ১৯৮৬ থেকে এই দিনটি জাতীয় বিজ্ঞান দিবস হিসাবে পালিত হয়ে আসছে। গত বছর বিজ্ঞান দিবস উদযাপনের ‘থিম’ ছিল ‘বিজ্ঞানচেতনার উন্নয়ন’। এ বছরের থিম ‘জাতিগঠনে বিজ্ঞান’। কিন্তু বিজ্ঞান কী, সেই ব্যাপারটা সম্পর্কে আমাদের যদি পরিষ্কার ধারণা না থাকে, আর বিজ্ঞান যে অভিশাপ নয়, আজও যদি তার প্রমাণ দিয়ে যেতে হয়, তবে বিজ্ঞানচেতনার উন্নয়নই বা হবে কী করে, আর তাকে জাতীয় গঠনকার্যে ব্যবহার করাই বা যাবে কী ভাবে?
ছোটবেলার সেই রচনায় লিখতাম, যাবতীয় ঘটনাবলির অন্তর্নিহিত যে নিয়ম, কার্যকারণ সম্পর্কে যে বিশেষ জ্ঞান, তা-ই হল বিজ্ঞান। এ সব লিখেছি বটে, কিন্তু বিজ্ঞানচেতনা বলতে কী বোঝায়, বিজ্ঞানমনস্ক হওয়ার প্রকৃত অর্থ কী, তা আমরা বুঝিনি। আসলে বিজ্ঞানচেতনার গোড়ার কথাই হল বুঝতে শেখা, প্রশ্ন করতে শেখা আর যে কোনও অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সচেতন হওয়া। কিন্তু এ কথাটা শুধু রচনায় নয়, আমাদের জীবনেও ক্রমশ এমন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে যে সারা জীবন বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেও আমরা ঠিক ভাবে যুক্তিবাদী বা বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে উঠতে পারি না।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা, ৩ মার্চ, ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/27/2020