ডাইক্লোরো-ডাইফেনিল-ট্রাইক্লোরোইথেন(গেসারল) একটি অত্যন্ত বিষাক্ত কৃত্রিম কীটনাশক, বেশির ভাগ মানুষই একে ডিডিটি, পোকার পাউডার ইত্যাদি নামে চেনে। কিছু দিন আগেও সারা পৃথিবীতে এটি প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হত। ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য পতঙ্গ বাহিত রোগ আটকানোর ক্ষেত্রে এর সাফল্যের জন্য জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে এর ভূমিকা চমকপ্রদ বলে মানা হত । সালফিউরিক অ্যাসিডের উপস্থিতিতে ক্লোরোবেনজিন এবং ক্লোরাল হাইড্রেটকে ঘনীভূত করে ডিডিটি তৈরি করা হয়।
১৮৭৩ সালে প্রথম এক জন স্নাতক স্তরের জার্মান ছাত্র এটি সংশ্লেষিত করেন। ১৯৩৯ সালে সুইস রসায়নবিদ ও পতঙ্গবিজ্ঞানী ড. পল মুয়েলার এটি পুনরায় আবিষ্কার করেন। এর জন্য ১৯৪৮ সালে তিনি নোবেল পান। ডিডিটি অত্যন্ত স্থায়ী চরিত্রের যৌগ। অ্যাসিডের সংষ্পের্শে এটি ভাঙে না। কিন্তু ক্ষারের সংষ্পর্শে এলে এটি থেকে ক্লোরিন ও জল আলাদা হয়ে যায়। বাতাস ও অতিবেগুনি রশ্মির উপস্থিতিতে ডিডিটি-র পচনের ঘটনা বিরল। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আজ ডিডিটি-র এই স্থায়ী চরিত্রই পরিবেশের পক্ষে অন্যতম প্রধান বিপদ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। এটি উর্বর ভূমিকে দূষিত করে, মাটির উপরের স্তর থেকে চুঁইয়ে নীচের জলতলে পৌঁছয় এবং মাটির নীচের জলকেও দূষিত করে।
তৃণভোজী প্রাণীরা ঘাস এবং জল থেকে এই ডিডিটি গ্রহণ করে এবং মাংস ও দুধের মাধ্যমে তা মানবদেহে চলে আসে। এর ফলে ডিডিটি মানব দেহের ত্বকনিম্নস্থ চর্বিতে জমা হয় এবং সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের সূক্ষ্ণ ভারসাম্যকে নষ্ট করে।
এর ফলে মানুষ স্নায়বিক শৈথিল্য, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস, জনন অঙ্গের কার্যক্রমে গোলমাল প্রভৃতি সমস্যায় ভুগতে শুরু করে। ডিডিটি যে হেতু খুব বেশি চর্বি-সমৃদ্ধ তন্তুতে জমা হয়, তাই এটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিকর পদার্থের সঙ্গে বুকের দুধে চলে যায়। ভারত ও জিম্বাবোয়ের স্তন্যপায়ী শিশুরা, দিনে যতটা গ্রহণ করা সম্ভব তার চেয়ে ৬ গুণ বেশি ডিডিই( ডিডিটি ভেঙে তৈরি একটি পদার্থ, যাতে খুব বেশি মাত্রায় ডিডিটি থাকে) খেয়ে নেয়।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/3/2020