কল্পনা কর, তুমি এমন একটা গ্রহে রয়েছে, যেখানে বায়ূমণ্ডল নেই (হয়তো আমরা চাঁদে উপনিবেশ স্থাপন করেছি)। তুমি যখন বায়ুনিরোধী বাড়ি থেকে বেরোও, তখন স্পেস স্যুট ব্যবহার করে থাকো। এ রকম দুনিয়ায় বাতাসের ঘর্ষণও থাকবে না। সেখানে কী করে দিন কাটাবে তুমি?
ধর, তুমি তোমার গ্রহের ও-পারে এক বন্ধুকে একটা প্যাকেট পাঠাতে চাও। তুমি সেটাকে একটা উচ্চতায় ধরে ধরে যদি নির্দিষ্ট আনুভূমিক গতিতে ছেড়ে দিতে পারো, তা হলে সেটা সেই উচ্চতায় একটি বৃত্তাকার পথে গ্রহকে পরিক্রমা করতে থাকবে। তোমার বন্ধু যেখানে থাকে, সেখান দিয়ে প্যাকেটটি যখন যাবে, তখন তোমার বন্ধু সেটা নিয়ে নিতে পারবে (প্যাকেটটা যে যাচ্ছে, সেটা অবশ্য তোমায় তোমার বন্ধুকে বলে রাখতে হবে, কারণ সে সব সময় তোমার পাঠানো প্যাকেটের জন্য অপেক্ষা করে থাকবে না)। প্যাকেটটিকে নির্দিষ্ট গতিতে পৌঁছে দিতে যেটুকু শক্তির প্রয়োজন, সেটাই তোমায় খরচ করতে হবে। প্যাকেটটিকে থামানোর যথাযথ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে তোমার বন্ধু সেই শক্তিটা ফিরেও পেতে পারে। কক্ষপথে কোনও জ্বালানি লাগবে না। উপগ্রহ যেমন পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘোরে, সে ভাবেই প্যাকেটটি ঘুরবে, বিনা জ্বালানিতে।
হ্যাঁ। প্যাকেটটি তোমার বাহনও হতে পারে। এটা অবশ্য সড়ক পথে নয়, আকাশপথে যাবে। গ্রহের বাড়িগুলো আকাশপথের অর্থাৎ যে পথ দিয়ে যানবাহন চলবে, তার বাইরে তৈরি করতে হবে। পরিবহণে প্রায় কোনও খরচই হবে না। কক্ষপথ তুমি যতটা চাইবে ততটাই নিচু হতে পারে। নীতিগত ভাবে বলতে গেলে এটা প্রায় ভূমি ছোঁয়া উচ্চতাতেও হতে পারে। কিন্তু পথে ছোট ছোট পাহাড়ের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়া এড়াতে পথ কিছুটা ওপর দিয়েই হবে।
এই কাল্পনিক ঘটনাবলী তোমায় কিছু বার্তা দিতে চায়। পৃথিবীতে যা জ্বালানি আমরা ব্যবহার করি, তা বাতাসের ঘর্ষণের সঙ্গে লড়াই করতেই ব্যবহৃত হয় (রাস্তাঘাটের অবস্থা বেশ ভালো ধরে নিয়ে বলছি)। যখনই আমরা থামার জন্য গতি কমাই, তখন যানটির গতিশক্তি ঘর্ষণের জন্য অপচয় হয়।
এ বার আমরা একটু গভীর ভাবে পদার্থবিদ্যার দিকে তাকাই। কোনও বস্তুর ওপর যদি কোনও বল প্রয়োগ না করা হয় তা হলে সেটি একই গতিতে সরলরেখায় চলতে থেকে। বল প্রয়োগ করলে তার গতি পালটায়। গতি না পাল্টিয়ে যদি কেবলমাত্র বস্তুটির অভিমুখ পাল্টাতে হয়, তা হলেও বল প্রয়োগ করা প্রয়োজন। একটি উপগ্রহের উপর তার গ্রহের যে অভিকর্ষজ টান ক্রিয়া করে, তার ফলেই উপগ্রহটির অভিমুখ নিয়ত পাল্টায় এবং তার কক্ষপথ বৃত্তাকার হয়।
m ভরের একটি বস্তু v গতিতে r ব্যাসার্ধের একটি বৃত্তাকার পথে ক্রমবর্ধমান গতিতে ঘুরছে। এ ক্ষেত্রে গ্রহের অভিকর্ষজ টানের পরিমাপ হবে GMm/r2. এখানে M হল গ্রহের ভর এবং G ধ্রুবক।
পৃথিবীর মতো গ্রহে কক্ষপথটি যদি মাটি ছোঁয়া উচ্চতায় হয়, তা হলে গতি হবে প্রায় ৭.৯ কিমি/প্রতি সেকেন্ড, যেটা একটা প্রবল গতি। এটা এতটাই বেশি যে, যে সব যান একক পরিমাণ অভিকর্ষজ ত্বরণে গতিশীল, তাদের জন্য প্রায় ৩০০০ কিলোমিটার লম্বা গতিবৃদ্ধির র্যাম্প লাগবে। কোনও বস্তুকে যখন ওপর থেকে পৃথিবীর মাটিতে ফেলা হয়, তখন সেটি প্রতি বর্গ সেকেন্ডে ৯.৮ মিটার ত্বরণে পতিত হয়। এই ত্বরণকেই এক g বলা হয়ে থাকে। এর দ্বিগুণ হলে তাকে বলা হয় ২ g।
যদি ২ g ত্বরণে কোনও যান চলে তা হলে সেই গাড়ির যাত্রী তার ওজনের দ্বিগুণ শক্তির বলে আসনে চাপা পড়ে যাবে। যদি গাড়িটি ৫ g ত্বরণে চলে তা হলে যাত্রী তার ওজনের ৫ গুণ শক্তিতে আসনের সঙ্গে মিশে থাকবে। কোনও মানুষ যদি কয়েক g ত্বরণে গতিশীল থাকে, তা হলে সেটা তার মোটেই আরামদায়ক মনে হবে না এবং সে ওই অবস্থায় বেশিক্ষণ থাকতেও পারবে না। অনেক বেশি g মৃত্যু ডেকে আনবে। তাই এই প্রক্রিয়ার পরিবহণ ব্যবস্থা বাস্তবোচিত নয়।
চাঁদের মতো কোনও গ্রহে v অনেক কম হবে, প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১.৭ কিমি। এটাও কোনও মানুষ যাত্রীর পক্ষে খুবই বেশি কিন্তু প্যাকেটের কথা আলাদা, সেটা অনেক বেশি পরিমাণ g-ও সইয়ে নিতে পারে। গ্রহাণুর মতো ছোট জায়গায় আমরা অবশ্যই এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করতে পারি, সেখানে প্রয়োজনীয় গতিবেগ অনেক কমই হবে।
কেএস বালাজি
দ্য আদার স্কুল
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/29/2020