আলোকতরঙ্গের মতই শব্দতরঙ্গও প্রতিফলিত, প্রতিসৃত ও শোষিত হয়। শব্দতরঙ্গের প্রতিফলনের ফলে প্রতিধ্বনির সৃষ্টি হয়। শব্দতরঙ্গ প্রতিফলিত হয়ে যথেষ্ট শক্তি নিয়ে, কিছু সময় পর তার উৎসে ফিরে সেটা স্পষ্ট শোনা যায়, তখন তাকে বলে প্রতিধ্বনি। যদি শব্দতরঙ্গে সেকেন্ডের দশ ভাগের এক ভাগ সময়ের মধ্যে ফিরে আসে তা হলে মানুষের কান সেটা আলাদা করে শুনতে পায় না।
এ বার আমরা চট করে হিসেব করেনি প্রতিফলনের তল কত দূরে হলে শব্দতরঙ্গের উৎসে ফিরে আসতে সেকেন্ডের দশ ভাগের এক ভাগের চেয়ে বেশি সময় লাগবে। ঘরের তাপমাত্রায় শব্দের গতি সেকেন্ডে ৩৪৪ মিটার। তুমি কি নিশ্চিত করতে পারবে যাতে প্রতিফলন হওয়ার দেওয়ালটি যে ব্যক্তি প্রতিধ্বনি শুনবেন, তার থেকে ১৬.২ মিটার দূরে থাকবে। সে ক্ষেত্রে প্রতিফলনের তলে পৌঁছতে শব্দের এক সেকেন্ডের ২০ ভাগের এক ভাগ সময় লাগবে এবং ফিরে আসতেও তাই লাগবে।
যদি তুমি বাদুড় হও, তা হলে তোমার কাছে প্রতিধ্বনি খুবই কাজের জিনিস। তাদের উঁচু ফ্রিকোয়েন্সির চিৎকারের প্রতিধ্বনি শুনতে শুনতে বাদুড় ওড়ে। প্রতিধ্বনির নীতি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা অনেক যন্ত্রের নকশা তৈরি করেছেন। যেমন, ডুবুরিরা শব্দতরঙ্গের প্রতিধ্বনির সময়ের তফাৎ পরিমাপ করে কাজ করেন। রাডার নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সির কিছু তরঙ্গ সম্প্রচার করে। বস্তু দ্বারা প্রতিফলিত করে দেওয়া অংশ রাডারগুলি গ্রহণ করে এবং বৈদ্যুতিন পদ্ধতিতে বস্তুর দূরত্ব ও সেটি কোন দিকে আছে তা নির্ণয় করে।
যখন কোনও তল শব্দ প্রতিফলিত করে তখন তা কিছুটা শোষণ করে এবং কিছুটা শক্তি প্রতিফলিত করে। এই প্রক্রিয়া বারবার চলতে চলতে শব্দ দুর্বল হয়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। শব্দের শোষণ হওয়ার জন্যই মানুষ ভর্তি হলঘরে প্রতিধ্বনি শোনা যায় না। কিন্তু ফাঁকা হলে তুমি শব্দ শুনতে পারবে। যখন কোনও ভয়াল যন্ত্রী কোনও বাজনা বাজান, তখন তা শুনতে কেন ভাল লাগে ? যে বাজাতে জানে না, সে বাজালে কেন বাজনাকে গোলমাল হচ্ছে বলে মনে হয়? সুরের শব্দ, গোলমালের থেকে আলাদা কারণ, সেটা নিয়মিত, সুসংবদ্ধ কম্পনের সৃষ্টি করে অন্য দিকে গোলমালের শব্দ হল অনিয়মিত, বিশৃঙ্খল কম্পনের সংগ্রহ মাত্র। কিন্তু আজকাল সুরকাররা গোলমালের শব্দকেও সুর তৈরিতে ব্যবহার করে থাকেন।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/24/2020