তাপ হল একটি অবিনশ্বর পদার্থ যা গরম বস্তু থেকে ঠান্ডা বস্তুতে প্রবাহিত হয় --- এই তত্ত্বের ভিত্তি থেকে আমরা পাই তাপের সংরক্ষণ নীতি। অন্য দিকে প্রাচীন কাল থেকেই আমরা জানি ঘর্ষণের ফলে তাপের সৃষ্টি হয়। কিন্তু কেন এই তাপ ‘উৎপাদন’ তা পদার্থবিদরা দীর্ঘদিন বলতে পারেননি। তার পর এই তত্ত্ব যখন সফল ভাবে প্রতিষ্ঠিত হল যে, ঘর্ষণের ফলে যতটুকু তাপ উৎপাদন হচ্ছে, তার সমপরিমাণ শক্তি খরচ হচ্ছে, তখন পদার্থবিদরা তাপ সৃষ্টির কারণ উপলব্ধি করতে পারলেন। ফলে আমরা ‘তাপ ও কাজ-এর সমতার’ নীতিতে উপনীত হলাম। আমাদের এই পেন্ডুলামের দৃষ্টান্তে যান্ত্রিক শক্তি ক্রমশ ঘর্ষণ-জনিত তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছে।
এই দৃষ্টান্তে তাপ শক্তি ও যান্ত্রিক শক্তির সংরক্ষণের সূত্রকে এক সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। পদার্থবিদরা এরপর বলতে থাকেন সংরক্ষণের নীতিকে রয়ায়ন ও তড়িৎচুম্বকের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যায়, সংক্ষেপে বলতে গেলে সব ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা যায়। দেখা যায়, আমাদের ভৌত ব্যবস্থায় মোট শক্তির পরিমাণ ধ্রুবক থাকে, তা সে যত পরিবর্তনই ঘটানো হোক।
এ বার ভরের নিত্যতা সূত্রের কথায় আসি। একটি বস্তু তার ত্বরণকে যা দিয়ে রোখে, তাকেই বলে ভর (নিষ্ক্রিয় ভর)। বস্তুর ওজন (ভারী ভর) দিয়েও তাকে মাপা যায়। এই দু’টি সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের সংজ্ঞা থেকেই যে কোন বস্তুর ভরের সমান পরিমাপ পাওয়া যায়, এটা সত্যিই অবাক কাণ্ড।
নীতি অনুযায়ী যে কোনও ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তনে ভর একই থাকে। এই অপরিবর্তনীয় চরিত্রের জন্য ভর পদার্থের একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ। উত্তপ্ত করা, গলানো, বাষ্পীভূত করা, অন্য রাসায়নিক যৌগের অংশ হিসেবে জুড়ে দেওয়া --- কোনওটাতেই মোট ভরের পরিবর্তন হয় না। কয়েক দশক আগে পর্যন্তও পদার্থবিদরা এই নীতি মেনে চলতেন। আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বের সামনে এই নীতি অপর্যাপ্ত হয়ে যায়। তখন তাকে শক্তি সূত্রের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়, প্রায় ৬০ বছর আগে তাপের সংরক্ষণের নীতির ক্ষেত্রে যা হয়েছিল।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 8/29/2019