অটো হান ভেবেছিলেন তিনি ভবিষ্যতে এক জন সঙ্গীতশিল্পী হবেন। তার পর ভেবেছিলেন চিত্রশিল্পী হবেন। তাঁর শিল্পী-বাবারও সেই স্বপ্নই ছিল।
শেষ পর্যন্ত অটো হান অবশ্য বাবার স্বপ্ন সফল করতে পারেননি। হয়তো একটু ভুল বলা হল, তিনিও এক জন শিল্পী হয়েছিলেন। রঙ আর তুলির বদলে হাতে ধরেছিলেন নানা ধরনের যন্ত্রপাতি। হয়েছিলেন বিজ্ঞান শিল্পী। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে ডিসেম্বরে জার্মানির অটো হান এবং স্ট্রাসমান এই দুই বিজ্ঞানী ইউরেনিয়াম-২৩৫ নিউট্রন কণা দিয়ে পরমাণু ভাঙতে সফল হলেন। ২২ ডিসেম্বর তাঁদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশের জন্য তাঁরা পত্রিকায় পাঠালেন। অটোহান ও লিজে মেইট্নার ছিলেন বহু দিনের সহকর্মী। জার্মানিতে হিটলারের অভ্যূদয়ের পর ইহুদি মেইটনার জার্মানি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন এবং সুইডেনে আশ্রয় নেন।
১৯৩৯ সালের প্রথম দিকে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত পদার্থ বিদ্যার সেই অধিবেশনে নিলস বোর অটোহানের পরীক্ষার যে ব্যাখ্যা বৈজ্ঞানিক মহলে তুলে ধরেন, তা সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে। অটো হানের শিল্প মাধুর্যকে সম্মান জানিয়েছিল নোবেল কমিটি। ১৯৪৪ সালে তাঁরই হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল সে বছরের রসায়ন শাস্ত্রে শ্রেষ্ঠ নোবেল পুরস্কার এবং বলা হয়েছিল ভারী কেন্দ্রকের ভাঙনের বিষয়ে গবেষণা আপনাকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে।
১৮৭৯ সালের ৮ মার্চ জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে জন্মেছিলেন অটো হান। বিজ্ঞান নিয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করলেন অটো হান। এ বার এলেন মহাবিদ্যালয়ের চত্বরে। সেখানেও তাঁর প্রতিভার পরিচয় পেয়ে সকলেই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তখন থেকেই ব্যবহারিক বিজ্ঞান সম্পর্কে অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে ওঠেন। শুধু তত্ত্বগত পরীক্ষা করলে চলবে না। বিজ্ঞান বলছে, হাতে কলমে প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত তুমি স্তব্ধ হবে না। পরমাণুর কেন্দ্রকের মধ্যে ভাঙন ঘটলে কী হবে, তার গতি প্রকৃতি নির্ধারণে অটো হান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। এখন বিজ্ঞান অনেকখানি এগিয়ে গেছে। তার আবিষ্কারের ফলে তেজস্ক্রিয়তা ও পরমাণু পদার্থ বিজ্ঞানের বহু ক্ষেত্রে উন্নতি সম্ভব হয়েছে। এই মহান বিজ্ঞানী ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে মারা যান।
সূত্র : বিশ্বের সেরা ১০১ বিজ্ঞানীর জীবনী, আ. ন. ম. মিজানুর রহমান পাটওয়ারি, মিজান পাবলিশার্স, ঢাকা
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019