অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

এনরিকো ফার্মি

এনরিকো ফার্মি

অত্যন্ত ছোটবেলা থেকেই ফার্মি (১৯০১-১৯৫১ খ্রি) ছিলেন অসম্ভব রকমের মেধাবী। জীবনে তিনি কখনও দ্বিতীয় হননি। ছোট বেলায় রোমের লোকাল গ্রামার স্কুলে ভর্তি হন, তাঁর প্রচন্ড আগ্রহ ছিল গণিত এবং পদার্থবিদ্যায়। তাঁর এ আগ্রহ দেখে তাঁর পিতার বন্ধুবান্ধবরা তাঁকে অত্যন্ত উৎসাহিত করত। ১৯১৮ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলোশিপ অর্জন করে ছিলেন। তিনি মাত্র চার বছর পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটিয়েছিলেন, সেখানে তিনি মাত্র ২১ বছর বয়সে এক্স-রে রশ্মির ওপর গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। এত অল্প বয়সে আর কেউ এত বড় ডিগ্রি লাভ করতে পারেননি। গৌরবময় শিক্ষাজীবন সমাপ্তির পর তিনি ১৯২৭ সালে রোম বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন।

১৯২৯ সালে তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার প্রথম ইতালিয়ান প্রফেসর হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার পর তদানীন্তন আমলের ইতালির প্রধানমন্ত্রী বেনিটো মুসোলিনি তাঁকে ইউরোপের বিজ্ঞান জগতের ‘রাইজিং স্টার’ বলে অভিহিত করেন এবং তাঁর প্রফেসর পদের জন্য অত্যন্ত উচ্চমানের বেতন নির্ধারণ করেন যা অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক বেশি।

১৯২০ সালের গোড়ার দিকে ফার্মি তাঁর গবেষণার বিশেষ বিষয় হিসাবে মনযোগ দেন নিউক্লিয়ার পদার্থবিদ্যায়। তিনি নিউট্রন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সৃষ্টি করেন ৮০ রকমের নতুন পদার্থ। তিনি দীর্ঘ টানা দশ বছর গবেষণা শেষে পদার্থবিজ্ঞানে কিছু মৌলিক আবিষ্কারে সক্ষম হন। আর সেটা হল কোনও বস্তুর পরমাণুকে ধীরগতি সম্পন্ন নিউট্রন কণিকার সাহায্যে আঘাত করলে তেজস্ক্রিয়তা প্রাপ্ত হয় এবং বিকিরণ শুরু করে। এ ক্ষেত্রে একটি কণিকা অন্য রকম কণিকায় রূপান্তরিত হয়। তিনি যে নিউট্রন ক্ষেপণে পরমাণুর কেন্দ্র ভেঙে যায় তা দেখান এবং এই পরমাণু কেন্দ্রে বিভাজন ঘটলে প্রচণ্ড পরমাণু শক্তি বেরিয়ে আসে এবং এ বিস্ফোরণ সুদূর প্রসারী হয়।

১৯৩০ সালে ফার্মি দেখান যে, চার্জহীন (নিউট্রাল) নিউট্রনকে আঘাত করলে উচ্চ শক্তি সম্পন্ন পারমাণবিক বিক্রিয়া হয় এবং সেখান থেকে তেজস্ক্রিয়প্রাপ্ত হয়ে নতুন নতুন কণিকা বের হয়। তিনি গাইগার মুলার কাউন্টার ব্যবহার করে নির্দেশ করেন পরমাণুর তেজস্ক্রিয়তা এবং নতুন নতুন রেডিও অ্যাকটিভ আইসোটোপ বের করেন। ফার্মির রাজনীতিতে ছিল সামান্যতম আগ্রহ। ১৯৩৩ সালের কথা ওই সময়ে ইতালিতে শুরু হয় প্রচন্ড রাজনৈতিক গোলযোগ। বেনিটো মুসোলিনি সারা দেশে কায়েম করেন একনায়ক তন্ত্র। হিটলার ছিলেন চরম ইহুদি-বিদ্বেষী। তাঁর দোসর মুসোলিনি ছিলেন একই মন মানসিকতার অধিকারী। ফার্মির স্ত্রী ছিলেন ধর্মে ইহুদি। তাই মুসোলিনির লোকজন স্ত্রীর জন্যই ফার্মিকে নানা ভাবে হয়রানি করতে শুরু করেন। ফলে এ রকম নিপীড়নমূলক অবস্থার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য তিনি গভীর ভাবে ভাবতে লাগলেন কী করা যায়। ঠিক এ সময়ই যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁর ডাক আসে। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আমন্ত্রণ পেয়ে ফার্মি অত্যন্ত খুশি হন। তাই আর বিলম্ব না করে তিনি সঙ্গে সঙ্গে পরিবার-পরিজন নিয়ে পাড়ি জমান আমেরিকায়। এটাই ছিল তাঁর শেষ যাত্রা। আর কোনও দিন তিনি ইতালিতে ফিরে আসেননি। ১৯৩৮ সালে তিনি পরমাণু বিজ্ঞানে মৌলিক আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরস্কার পান এবং এ নোবেল পুরস্কারের অর্থই তাঁকে দারুণ ভাবে সাহায্য করেছিল আমেরিকায় স্থায়ী ভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে। এর পর থেকে ফার্মি শুরু করেন আমেরিকায় তাঁর নতুন জীবন এবং এসেই তিনি নিউইয়র্ক সিটির কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন এবং ১৯৩৯ সালে তিনি প্রফেসর হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিরত অবস্থায়ই ফার্মি তাঁর নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা চালান এবং ইউরেনিয়াম নিউক্লিয়াসে নিউট্রনের সাহায্যে আঘাত করে সাফল্য লাভ করেছিলেন তিনি। এ পদ্ধতির ওপরই দীর্ঘ কয়েক বছর কাজ করার পর সরকারি অর্থানুকূল্যে তিনি ১৯৪২ সালে শিকাগো শহরে প্রতিষ্ঠা করেন বিশ্বের প্রথম সফল বাস্তব পারমাণবিক চুল্লি। এ চুল্লিতেই তিনি পরমাণুর বিভাজন ঘটিয়ে শক্তি উৎপাদনে সক্ষম হন। গত শতাব্দীর আধুনিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এটাই সবচেয়ে বড় ধরনের সাফল্য। ফলে চারিদিকে ফার্মির জয়জয়কার পড়ে যায়।

ফার্মির নেতৃত্বে ও তত্ত্বাবধানেই শুরু হয় পারমাণবিক বোমা তৈরির কাজ। এ প্রকল্পের নামই হল যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটান প্রকল্প। পরে বোমা তৈরির কাজ শেষ হলে পরীক্ষামূলক বিষ্ফোরণ ঘটানো হয় ১৯৪৫ সালের ১৬ জুলাই। এ বোমাই পরে বাস্তব ক্ষেত্রে নিক্ষিপ্ত হয় জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে। যার ভয়াবহ রূপ এ পৃথিবীর মানুষ এখনও ভুলতে পারে না।

বিজ্ঞানে বিষ্ময়কর অবদানের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ১৯ মার্চ ১৯৪৬ সালে তাঁকে মডেল অব মেরিট পুরস্কারে ভূষিত করেন। বিশ্বের প্রথম পরমাণু চুল্লির নকশা তৈরি করে শিকাগোতেই। শিক্ষক হিসেবে সফল এবং অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন ফার্মি। পৃথিবী জোড়া তাঁর যখন প্রচণ্ড খ্যাতি তখনই মাত্র ৫৩ বছর বয়সে ১৯৫৪ সালের ২৮ নভেম্বর আকস্মিক ভাবে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা সারা বিশ্বের অপূরণীয় ক্ষতি হয়। যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রবর্তন করেছেন ফার্মি পুরস্কার।

এ ছাড়াও বিশ্ববিশ্রুত এ মহান বিজ্ঞানীর নামকে অমর করে ধরে রাখার জন্য রসায়নে ১০০ তম মৌলটির নাম রাখা হয়েছে ফার্মিয়াম, যা পর্যায় সারণিতে অ্যাকটিনাইড সিরিজের অন্তর্ভুক্ত।

সূত্র : বিশ্বের সেরা ১০১ বিজ্ঞানীর জীবনী, আ. ন. ম. মিজানুর রহমান পাটওয়ারি, মিজান পাবলিশার্স, ঢাকা

সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/23/2019



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate