ঠিক কবে থেকে মানুষ বিজ্ঞান চর্চা করছে, তার সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও ইতিহাসবিদদের মতে, প্রায় ৪ হাজার বছর আগে থেকে মানুষ বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্যকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও ভগ্নাবশেষ থেকে প্রাপ্ত নিদর্শন এবং হাড় ও পাথরের ওপর বিভিন্ন লেখা থেকে এটা অনুমান করা হয়। যুগে যুগে মনীষী ও জ্ঞানী ব্যক্তিরা তাঁদের কর্ম, অভিজ্ঞতা ও মননশীলতা দিয়ে মানব সভ্যতাকে বহু দূর এগিয়ে নিয়েছেন। আর সেই প্রাচীনকাল থেকেই তাঁদের কৃতকর্ম ও মননশীল সম্পদকে সংরক্ষণের জন্য মানুষ নানা ভাবে চেষ্টা চালিয়েছে।
অতি প্রাচীন যুগে মনের ভাব ধরে রাখতে পাহাড়ের গায়ে, বনের গাছে বা পাথরের ওপর দাগ কেটে বা সাংকেতিক চিহ্ন এঁকে রাখা হত। আবার কোনও কিছুর হিসাব রাখতে পাথরের টুকরো সংরক্ষণ ও কাপড়ে গিঁট বেঁধে গণনার প্রচলন ছিল। প্রয়োজনের তাগিদে এবং সভ্যতার ক্রমবিকাশে এ সব পদ্ধতি অপ্রতুল ও অচল হয়ে পড়ে। আসতে থাকে যন্ত্রের যুগ। অবশেষে ছাপাখানা উদ্ভাবনের মাধ্যমে এ কাজে মানুষের চেষ্টা পূর্ণতা লাভ করে।
ছাপাখানা বা প্রিন্টিং প্রেস একটা যান্ত্রিক ব্যবস্থা, যেখানে কালিযুক্ত তল বা পদার্থের ওপর চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে কাগজ, কাপড় বা অন্যান্য বস্তুতে লেখা বা ছবির ছাপ তৈরি করা যায়। ১৪৩৯ সালে এ ধরনের পদ্ধতি প্রথম উদ্ভাবন করেন জার্মানির এক জন স্বর্ণশিল্পী জোহান গুটেনবার্গ (১৪০০-১৪৬৮ খ্রি)। পরবর্তী বছর অর্থাৎ ১৪৪০ সালে তিনি এ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটান। তবে কাঠের ব্লকের সাহায্যে ছবি ও লেখা ছাপার প্রযুক্তি এর কয়েকশো বছর আগে চিন, কোরিয়া ও পূর্ব এশিয়াতে প্রচলিত ছিল বলে জানা যায়।
১৪৪১ সালে চিনের বাই সিং মুভেবল টাইপ প্রিন্টিংয়ের উদ্ভাবন করেছিলেন। ১৪৩৬ সাল থেকে গুটেনবার্গ প্রিন্টিং প্রেস তৈরির কাজ শুরু করেন। ১৪৪৮ সালে তিনি তাঁর ছাপার যন্ত্র দিয়ে ওই বছরের ক্যালেন্ডার ছাপান। ১৪৫০ সালে জার্মানিতে প্রথম প্রিন্টের বাইবেল প্রকাশিত হয়। ছাপার কাজে গুটেনবার্গের প্রযুক্তি প্রথমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপে। পরে তা বিশ্বের অন্যান্য দেশেও বিস্তৃতি লাভ করে। পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি উন্নত ব্যবস্থায় যান্ত্রিক ভাবে বই ছাপার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন জোহান গুটেনবার্গ। এর আগে পর্যন্ত হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপির প্রচলন ছিল। চলতে থাকে ছাপাখানার উন্নয়ন। গুটেনবার্গের উদ্ভাবিত পদ্ধতিই পর্যায়ক্রমে পরিমার্জিত ও যান্ত্রিক কৌশলাদির উন্নয়ন ঘটায়। এটা ছাপার কাজের জন্য মূল ব্যবস্থা হিসেবে বিংশ শতাব্দীর শেষ দিক পর্যন্ত চালু ছিল। বলা যায়, কম্পিউটার প্রেস অর্থাৎ অফসেট প্রিন্টিং উদ্ভাবনের আগে পর্যন্ত ওই পদ্ধতিই জনপ্রিয় ছিল।
সূত্র : বিশ্বের সেরা ১০১ বিজ্ঞানীর জীবনী, আ. ন. ম. মিজানুর রহমান পাটওয়ারি, মিজান পাবলিশার্স, ঢাকা
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/27/2020