ড্যানিশ বালকটির ছোটবেলা থেকেই আগ্রহ ছিল খেলাধুলায়। ছেলেটির বাবা ছিলেন কোপেনহাগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত ফিজিওলজিস্ট। বাবার কাছ থেকেই ছোটবেলায় বিজ্ঞান ও গণিত সম্পর্কে প্রাথমিক আগ্রহ পায় সে। বড় হয়ে ফুটবলপ্রিয় ড্যানিশ বালকটির পরিচয় হয় ‘বিংশ শতকের প্রভাবশালী পদার্থবিজ্ঞানীদের এক জন’। কোপেনহাগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত ও দর্শনে ভর্তি হওয়া এই কিশোরের নাম নিলস হেনরিখ ডাভিড বোর। ১৮৮৫ সালে জন্ম নেওয়া নিলস বোর পদার্থের আণবিক গঠন ও কোয়ান্টাম মেকানিক্সের গবেষণার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। ছাত্র অবস্থাতেই তিনি ক্রিশ্চিয়ান ক্রিশ্চিয়াসেন, স্যার জে জে থমসন, আর্নেস্ট রাদারফোর্ডের মতো বিখ্যাত পদার্থবিদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান। ১৯১৩ সালে তিনি রাদারফোর্ডের নিউক্লিয়ার মডেলের ওপর ভিত্তি করে তাঁর বিখ্যাত পদার্থের পারমাণবিক গঠন মডেল প্রকাশ করেন। এই মডেল অনুসারে ইলেকট্রন পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে আবর্তন করে। মৌলের রাসায়নিক প্রকৃতি নির্ভর করে নিউক্লিয়াসের বাইরের কক্ষপথে ইলেকট্রনের সংখ্যার ওপর। এই মডেলে বোর প্রথম ধারণা দেন, ইলেকট্রন উচ্চশক্তির কক্ষপথ থেকে নিম্নশক্তির কক্ষপথে গেলে পৃথক ভাবে শক্তি তথা ফোটন নির্গত করে। তাঁর এই তত্ত্বকে কোয়ান্টাম থিওরির ভিত্তি বলা হয়। এই গবেষণার জন্য ১৯২২ সালে বোর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। নিলস বোর তাঁর ‘বোর মডেল’, ‘শেল মডেল’ ও ‘লিকুইড ড্রপ মডেল’-এর জন্য পদার্থ ও রসায়নবিজ্ঞানে স্মরণীয়। বোর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকার পারমাণবিক প্রকল্প ম্যানহাটন প্রজেক্টে কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনি পারমাণবিক শক্তি শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি ১৯৫৪ সালে ইউরোপীয় পারমাণবিক সংস্থা (সার্ন) প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন। খ্যাতিমান এই পদার্থবিদ ১৯৫৭ সালে ‘অ্যাটম ফর পিস প্রাইস’ অর্জন করেন। বিজ্ঞানে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১০৭ নম্বর মৌলের নাম রাখা হয়েছে ‘বোরিয়াম’। নিলস বোরই একমাত্র ব্যক্তি, যাঁর ছেলে 'আগে বোর' পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার (১৯৭৫) পান। বিংশ শতকের প্রভাবশালী এই বিজ্ঞানী ১৯৬২ সালে মারা যান।
সূত্র : বিশ্বের সেরা ১০১ বিজ্ঞানীর জীবনী, আ. ন. ম. মিজানুর রহমান পাটওয়ারি, মিজান পাবলিশার্স, ঢাকা
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/2/2020