অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

রামানুজন

রামানুজন

গতকাল ২২শে ডিসেম্বর, গণিতবিদদের গণিতবিদ খ্যাত রামানুজনের ১২৯তম জন্মদিন গেছে। ভারতের মাদ্রাজ (বর্তমান চেন্নাই) থেক প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরের এক অজপাড়াগায়ে ১৮৮৭ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা-মা বেশীমাত্রায় গরীব ছিলেন, যার কারণে তাকেও অভাবের ভাগ টেনে নিতে হয়েছে। গণিতের প্রতি তার প্রতিভাটা একটু আগে আগেই বিকশিত হয়েছিল। মাত্র ১৫ বছর বয়সে গণিতের জটিল জটিল সমস্যার সমাধান করে ফেলেছিলেন। তারও আগে স্কুলের বন্ধুদের এমন কিছু সংখ্যা যা কখনোই বলে শেষ করা যায়না যেমন পাই এর মান কিংবা দুই এর বর্গমূল যত খুশি তত ঘর পর্যন্ত বলে দিয়ে অবাক করে দিতেন।

অন্যান্য অনেক গণিতবিদ, বিজ্ঞানীদের মত গণিতে সেরা হলেও বাকি বিষয়গুলোতে একদমই কাঁচা। ভাল ফলাফল করে মেট্রিক পরীক্ষায় পাস করলেও কলেজ পার হতে পারেননি ইংরেজিতে খুব কাঁচা ছিলেন বলে। বারবার চেষ্টা করার পর একসময় ক্ষুধা দারিদ্র্যতার মাঝেই পুরোপুরি নিমগ্ন হয়ে গেলেন গণিত চর্চায়। দিন রাত শুধু গণিত আর গণিত, বিয়ে করার পরেও সংসার ধর্ম ছেড়ে গণিত নিয়ে পড়ে থাকা। একসময় তার সংসারের কথা ভেবে নানা চেষ্টা চরিত্রে মাদ্রাজ পোর্ট ট্রাস্টে ক্লার্কের চাকুরী নিলেন। এই চাকুরীতে মন্দের মাঝে কিছুটা ভাল হল। সেখানে এমন কিছু মানুষ পাওয়া গেল যারা তার গণিতের প্রতিভার মূল্য বুঝতে পেরেছিল। তাদের সূত্র ধরে কয়েকজন গণিত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ লোকের সাথে তার পরিচয় হল। পরবর্তীতে এদের উৎসাহে রামানুজনের কয়েকটি গবেষণা প্রবন্ধ বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হল।

যার কারণে রামানুজন সাঁরা দুনিয়ার গণিতবিদদের কাছে পরিচিত হন তিনি লন্ডনের বিখ্যাত সংখ্যাতত্ত্ববিদ জি. এইচ. হার্ডি। রামানুজন কিছুটা সাহস নিয়ে একসময় দারুণ একটা কাজ করে ফেলেন- ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হার্ডিকে একটি চিঠি লিখেন। চিঠির নিচে দেন তার উদ্ভাবন করা পাক্কা ১২০টা থিয়োরেম। হার্ডি তার প্রতিভা বুঝতে পারেন এবং নানা কাঠখড় পুড়িয়ে তাকে ক্যামব্রিজে নিয়ে আসেন। তারই ঐকান্তিক চেষ্টায় রামানুজন সাঁরা বিশ্বের গণিতবিদদের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেন।

রামানুজন ছিলেন অবিশ্বাস্য এবং আশ্চর্যরকম মেধার অধিকারী। আর সাথে সাথে আশ্চর্যরকম গোরা ও কুসংস্কারে বিশ্বাসী। হার্ডি যখন তাকে ক্যামব্রিজে তথা লন্ডনে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছে তখন তিনি যেতে চাইছেন না সমুদ্র পাড়ি দিতে হবে বলে। তার ধর্মবিশ্বাস অনুসারে সমুদ্র পাড়ি দিলে জাত চলে যাবে। আবার সে বিশ্বাসের দেবীর স্বপ্নের আদেশ শুনেই সমুদ্র পড়ি দিয়েছিলেন। তিনি তার কাজগুলো সকালে ঘুম থেকে ওঠে নোট খাতায় লিখে রাখতেন। লিখতেন শুধুই ফলাফল, কোনো প্রমাণ করতেন না। কেন তিনি এমনটা করতেন তা এক বিরাট রহস্য। যদিও তিনি সবসময় বলতেন তার দেবী নামগিরি নাকি তাকে স্বপ্নে এসে এই কথা বলে গিয়েছেন।

আর তিনি কেন প্রমাণগুলো খাতায় লিখতেন না সে ব্যাপারে এক গণিতবিদ মত দেন যে, রামানুজনের কাছে প্রমাণটা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। যেটা মূল জিনিস সেটা হলেই যথেষ্ট মনে করতেন তিনি। আর আরেকটা কারণও অনুমান করা হয়, রামানুজন আর্থিকভাবে সচ্ছল ছিলেন না আর তখনকার সময়ে কাগজের দাম ছিল চড়া। প্রয়োজনে স্লেটে লিখতেন। এখানে উল্লেখ রাখা ভাল যে এই সময়টা ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়। যুদ্ধ মানুষের জীবনযাত্রার প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই আঘাত করেছে। রামানুজনের নোটখাতা পরবর্তীতে অনেক গণিতবিদের চিন্তার খোঁড়াক হয়েছে, সমস্যার সমাধান হয়েছে।

আশ্চর্যরকম মেধা ছিল তার, আর সে কারণেই তাকে অভিহিত করা হত গণিতবিদদের গণিতবিদ বলে। তার চাকুরী নেবার আগে একদম প্রথম দিকের ঘটনায় রামানুজন সম্পর্কে গণিত বিশেষজ্ঞ রামচন্দ্র রাও নিজের ভাষায় বর্ণনা করেছেন-

“…তিনি খাতা খুলে তাঁর আবিষ্কৃত কিছু বিষয় আমার কাছে ব্যাখ্যা শুরু করলেন এবং আমি সঙ্গে সঙ্গেই বুঝতে পারলাম যে তার বক্তব্য খানিকটা গতানুগতিক ধারা বহির্ভূত; …তিনি আমার জ্ঞানের পরিধি বুঝতে পারেন এবং (পরবর্তীতে) তিনি কিছু সহজতর বিষয় আমার নিকট ব্যাখ্যা করেন। তাঁর ব্যাখ্যা তৎকালীন অনেক পাঠ্যপুস্তক অপেক্ষা উৎকৃষ্ট ছিল এবং তিনি যে একজন খ্যাতিমান ব্যক্তি এ সম্পর্কে আর কোন সন্দেহ রইলো না। অতঃপর তিনি ধাপে ধাপে উপবৃত্তিক যোগজ (elliptic intergal) এবং অধিজ্যামিতিক ধারা (Hypergeometric series) আমার নিকট ব্যাখ্যা করেন এবং সর্বশেষ তাঁর অপসারী ধারা তত্ত্ব (Theory of divergent series) যা এখনও জগতবাসীর নিকট অজ্ঞাত, আমাকে অভিভূত করে। আমি তাঁর কাছে জানতে চাই, তিনি কী চান। তিনি জানান যে, কোনরকম সামান্যভাবে গ্রাসাচ্ছনের উপযুক্ত একটি ব্যবস্থা হলে তিনি তাঁর গবেষণা চালিয়ে যেতে পারেন।

পৃথিবীর মানুষও একটা সময় তাকে তার সম্মানটুকু দিল, তাকে ট্রিনিটি কলেজের ফেলো এবং রয়াল সোসাইটির সদস্য করা হল। তিনিই সমগ্র ভারতের মাঝে প্রথম ব্যক্তি যিনি রয়াল সোসাইটির সদস্য হলেন। কিন্তু পৃথিবী এই অনন্য প্রতিভাধর মানুষটিকে বেশি দিন পেলো না। মাত্র ৩২ বছর বয়সে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান রামানুজন।

গতকাল ২২শে ডিসেম্বর এই অসাধারণ প্রতিভাধর গণিতবিদের জন্মদিনে রইল শুভেচ্ছা। পৃথিবী যেন এমন সন্তান আরও হাজার বার জন্ম দিতে পারে।

সূত্র: বিজ্ঞানপত্রিকা

সর্বশেষ সংশোধন করা : 3/6/2024



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate