আলেকজান্ডার ফ্লেমিং পেনিসিলিন আবিষ্কার করেছিলেন আকস্মিক এক ঘটনাক্রমে। স্ট্যাফাইলোকক্কাস নামক জীবাণু নিয়ে কাজ করতে গিয়েই তিনি এমন এক ধরনের ছত্রাকের সন্ধান পান, যার জীবাণুনাশক ক্ষমতা রয়েছে। ছত্রাকটির নাম ‘পেনিসিলিয়াম নোটেটাম’।
ফ্লেমিং ছিলেন স্কটল্যান্ডনিবাসী চিকিৎসক ও জীবাণুতত্ত্ববিদ। জন্ম ১৮৮১ সালের ৬ আগস্ট একটি কৃষক পরিবারে। তিনি ১৯০৬ সালে সেন্ট মরিস হাসপাতাল মেডিক্যাল স্কুল থেকে ডাক্তারি পাস করেন। চিকিৎসক হলেও জীবাণুতত্ত্বের দিকেই তাঁর আগ্রহ ছিল সব চেয়ে বেশি। তাই জীবাণু সম্পর্কিত বিভিন্ন দিক নিয়ে তিনি সারাজীবন গবেষণা করে গেছেন। ১৯২৮ সালে তিনি আবিষ্কার করেন বিশেষ এক ধরনের ছত্রাকে জীবনরক্ষাকারী পেনিসিলিনের অস্তিত্ব। আলেকজান্ডার ফ্লেমিং সর্বপ্রথম পেনিসিলিন আবিষ্কার করলেও একে মানবদেহে ব্যবহারের উপযোগী অবস্থায় নিয়ে আসেন দু’জন বিজ্ঞানী - হাওয়ার্ড ফ্লোরি (১৮৯৮-১৯৬৮) ও আর্নস্ট চেইন (১৯০৬-১৯৭৯)। ১৯৩৮ সালে এঁরা পেনিসিলিনের নিষ্কাশন ও বিশুদ্ধকরণের কাজ সম্পন্ন করেন।
ফলে এ দু’জন বিজ্ঞানীও আলেকজান্ডার ফ্লেমিংয়ের সঙ্গে সম্মিলিত ভাবে ১৯৪৫ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। পেনিসিলিন আবিষ্কার ছিল চিকিৎসা জগতের জন্য এক নতুন দিগন্তের সন্ধান। আলেকজান্ডার ফ্লেমিং নোবেল পুরস্কার ছাড়াও তাঁর গবেষণাকর্মের জন্য পেয়েছিলেন আরও স্বীকৃতি ও সম্মান।
অ্যান্টিবায়োটিকের আবিষ্কর্তা হিসেবেও আলেকজান্ডার ফ্লেমিং প্রসিদ্ধ।
অ্যান্টিবায়োটিক(Antibiotics) কয়েকধরণের জৈব-রাসায়নিক ঔষধ যা অণুজীবদের (বিশেষ করে ব্যাক্টেরিয়া) নাশ করে বা বৃদ্ধিরোধ করে। সাধারানতঃ এক এক অ্যান্টিবায়োটিক এক এক ধরণের অণুজীব তৈরি করে ও অন্যান্য অণুজীবের বিরুদ্ধে কাজ করে। বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়া(Bacteria) ও ছত্রাক(Fungi) অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করে। "অ্যান্টিবায়োটিক" সাধারণভাবে ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে ব্যাবহার হয়, ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে না। তবে অ্যান্টিবায়োটিক হল আরও বড় জীবাণু-নাশক শ্রেণির সদস্য যার মধ্যে আছে নানা প্রকার অ্যান্টি-ভাইরাল (ভাইরাস-নাশক), অ্যান্টি-ফাঙ্গাল (ছত্রাক-নাশক) ইত্যাদি। প্রাকৃতিতেও বহু জীবাণু-নাশক আছে যাদের অনেককেই এখনও ঔষধ হিসাবে পরিক্ষা করে দেখা হয়নি, যেমন ব্যাক্টেরিওসিন (Bacteriocin)- ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা নিসৃত কাছাকাছি ধরণের ব্যাক্টেরিয়া-ঘাতক প্রোটিন টক্সিন (বিষ)। সাধারণভাবে অ্যান্টিবায়োটিক শব্দটি ক্ষুদ্র জৈব-রাসায়নিক পদার্থ বোঝায়, বৃহত প্রোটিন নয় বা অজৈব-রাসায়নিক অণু নয়, (যেমন আর্সেনিক)
১৯৪৩ সালে ফ্লেমিং রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন এবং ১৯৪৪ সালে নাইট উপাধিতে ভূষিত হন। স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং ১৯৫৫ সালের ১১ মার্চ লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র : বিশ্বের সেরা ১০১ বিজ্ঞানীর জীবনী, আ. ন. ম. মিজানুর রহমান পাটওয়ারি, মিজান পাবলিশার্স, ঢাকা
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019