বিগ ব্যাং’ মডেলটি আদতে দাঁড়িয়ে আছে পদার্থবিদ্যার দু’টি মূল স্তম্ভের ওপর। এই দুই মূল স্তম্ভের একটি হল আলবার্ট আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ (General Theory of Relativity) আর অন্য স্তম্ভটি হল Cosmological Principle বা সৃষ্টিতত্ত্বের নীতি। আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ মহাকর্ষ সম্পর্কিত একটি জ্যামিতিক তত্ত্ব। এই তত্ত্ব বর্তমানে বহুল পরীক্ষিত ও সর্বজন গৃহীত। এই তত্ত্ব অনুযায়ী বস্তুর (matter) উপস্থিতি তার চার পাশের দেশকালকে (space-time) বেঁকিয়ে দেবে। বিখ্যাত পদার্থবিদ জন হুইলারের বক্তব্য অনুযায়ী ‘বস্তু দেশকালকে বলে কী ভাবে বেঁকাতে হয় আর দেশকাল বস্তুকে বলে কী ভাবে সরতে হয়।’ সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদের প্রস্তাবনার (১৯১৬) পর, আইনস্টাইন সহ অন্যান্য বিজ্ঞানী চাইলেন এই তত্ত্ব প্রয়োগ করে আমাদের মহাবিশ্বে পদার্থসমূহ কী ভাবে বণ্টিত রয়েছে তা জানতে। খালি চোখে আকাশের দিকে তাকালে শুরুতেই যেটা ধারণা করা যায় তা হল, মহাবিশ্বের সকল বস্তু (নক্ষত্রপুঞ্জ, ছায়াপথ ইত্যাদি) ছড়িয়ে আছে সর্বত্র সমান হারে (homogeneous) এবং সমস্ত দিকে (isotropic)। ধরা যাক, আপনি একটা দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ ঘাসে ঢাকা মাঠের একেবারে মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে আছেন। যে দিকেই তাকান না কেন, আপনি কেবল সবুজ ঘাসই দেখতে পাবেন। কারণ মাঠের ঘাসগুলো সমস্ত দিকে সমান হারে বণ্টিত হয়ে রয়েছে। যদিও কাছ গিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন তা হলে হয়তো মাঠের মধ্যে অনেক অংশ পাওয়া যাবে যেখানে হয়তো ঘাসের ঘনত্ব কম, তলা থেকে মাটির ধূসরতা বেরিয়ে পড়েছে। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে, একটা বড় পরিমণ্ডলে মাঠের ঐ ছোট ছোট ঘাসহীন অংশগুলো আমাদের চোখে পড়ে না। মনে হয় মাঠের ঘাস সমস্ত দিকে সমান ভাবে বণ্টিত হয়ে রয়েছে। আমাদের মহাবিশ্বের পদার্থও, একটা বিরাট অঞ্চল হিসেবে দেখলে, ঐ একই রকম ভাবে বণ্টিত রয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। এটাই সৃষ্টিতত্ত্বের নীতি বা কসমোলজিকাল প্রিন্সিপাল (Cosmological Principle) নামে পরিচিত।
সূত্র : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংসদ ও দফতর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/5/2020
পার্টিকেল ফিজিক্স বা কণা পদার্থবিজ্ঞানে অনেকেরই আগ...