যে হেতু সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ অনুযায়ী মহাকর্ষ আসলে দেশকালের ধর্ম, তাই মহাবিশ্বের গতিবিধি বোঝার অর্থ আসলে দেশকালের গতিবিধির ওপর নজর রাখার সঙ্গে তুলনীয়। বিজ্ঞানীরা অঙ্ক কষে দেখিয়েছেন যে আমাদের বিশ্ব যদি সমহারে ও সমস্ত দিকে ছড়িয়ে থাকে, তা হলে পদার্থের উপস্থিতির কারণে দেশকালের বক্রতা তিন প্রকার হতে পারে। দেশকাল ধনাত্মক ভাবে বেঁকে থাকতে পারে, ঠিক একটা বলের তল যে ভাবে বেঁকে থাকে। অর্থাৎ, এর পরিসর সসীম, কারণ একটা বলের ওপর একটা বিন্দু থেকে যাত্রা শুরু করে আবার সেখানেই ফিরে আসা সম্ভব। তাই এই ধরনের বক্রতাযুক্ত বিশ্বকে বলা যায় বদ্ধ মহাবিশ্ব। দেশকালের বক্রতা ঋণাত্মক হতে পারে, অনেকটা ঘোড়ার জিনের মতো অর্থাৎ এর পরিসর অসীম। তাই একে বলা চলে মুক্ত মহাবিশ্ব। এ ছাড়া আমাদের বিশ্বের কোনও রকম বক্রতা নাও থাকতে পারে, সে ক্ষেত্রে এটি সমতল বিশ্ব এবং অসীম তার বিস্তার।
আমরা দেখেছি যে দেশকালের বক্রতা নির্ভর করে পদার্থের ওপর। পদার্থের ঘনত্ব যত বেশি, দেশকালের বক্রতাও তত বাড়তে থাকে। অর্থাৎ পদার্থের ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণ করছে ব্রহ্মান্ডের জ্যামিতিকে। দেখানো যায় যে মহাবিশ্বে পদার্থের ঘনত্ব যদি একটি বিশেষ ঘনত্বের (critical density) চেয়ে বেশি হয় তা হলে আমাদের মহাবিশ্ব বদ্ধ ও সসীম। যদি তা ঐ বিশেষ ঘনত্বের চেয়ে কম হয় তা হলে মহাবিশ্ব মুক্ত ও অসীম এবং সমান হলে তা সমতল। সুতরাং, একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ‘আমাদের মহাবিশ্বের ঘনত্ব কত ?’ এই প্রশ্নের উত্তরে আসার আগে একটু পেছন ফিরে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক এই বিষয়ের ইতিহাসের ওপর। যখন নিউটন তাঁর মহাকর্ষ সংক্রান্ত সূত্রটি আবিষ্কার করলেন, তখন তিনি দেখালেন যে মহাকর্ষ বল একটি আকর্ষক বল, অর্থাৎ এই বিশ্বের প্রতিটি বস্তুই একে অপরকে আকর্ষণ করছে। তা হলে তো প্রতিটা বস্তুর একে অপরকে আকর্ষণের ফলে আমাদের মহাবিশ্বের একটা সময় ভেঙে পড়ার কথা, তা তো হচ্ছে না। এর বহু বছর পর আইনস্টাইন যখন নতুন আঙ্গিকে মহাকর্ষকে দেখতে চাইলেন তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদের তত্ত্বে, তখন তিনিও একই সমস্যার সম্মুখীন হলেন; তাঁর তত্ত্বের সমীকরণ বলছিল যে আমাদের মহাবিশ্ব হয় সম্প্রসারিত বা সঙ্কুচিত হচ্ছে। আইনস্টাইনও তা মানতে পারলেন না, তিনি ধরে নিলেন আমাদের বিশ্ব স্থির এবং যদিও তাঁর তত্ত্ব থেকেই এক সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বের ছবি পাওয়া যাচ্ছিল, তবুও তিনি তাঁর সমীকরণে জোর করে একটি অতিরিক্ত রাশি যোগ করলেন যাতে কেবল স্থির মহাবিশ্বের ধারণাটাই পাওয়া যায়। এই অতিরিক্ত রাশিটিকে cosmological constant বা মহাজাগতিক ধ্রুবক বলা হয়।
সূত্র : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংসদ ও দফতর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/21/2019